রমজানের শেষ দশকের একটি আমল হলো ইতিকাফ করা। ই’তিকাফ হলো এই মুবারক দিনগুলোয় ইবাদত-বন্দেগীর উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান ও রাতযাপন করা।

আল্লাহ বলেনঃ “এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।” ( সূরা বাকারা : ১২৫)

ইতিকাফ বিষয়ে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদীসের শেষাংশে রয়েছে :

مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي فَلْيَعْتَكِفْ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ فَقَدْ أُرِيْتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ أُنْسِيْتُهَا
যে আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায় সে যেন শেষ দশকে ই’তিকাফ করে, কেননা এই রাত আমাকে দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে (বুখারী)।

তাই যার শক্তি সামর্থ্য আছে তার উচিত হবে ইতিকাফ করে শেষ দশকের রাতগুলো যাপন করা। ইতিকাফ পালনকারী নিজকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য, দুআ-মুনাজাত, যিকর ইত্যাদির জন্য সে নিজকে মসজিদে আঁটকে ফেলে। দুনিয়াবী সকল দৌড়ঝাঁপ থেকে মুক্ত হয়ে সে মসজিদের পবিত্র আবহে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে। মন ও শরীর উভয়টাকেই সে নিরঙ্কুশভাবে রাব্বুল আলামীনের দরবারে সঁপে দেয়। যা কিছু আল্লাহকে সন্তষ্ট করে শুধু তাতেই নিজকে সংশ্লিষ্ট করে নেয়। আর এভাবে ই’তিকাফ করার মাধ্যমে সে শুধুই আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। যা করলে আল্লাহ রাযি হন শুধু তাতেই নিজকে নিয়োজিত করে।

সুপ্রিয় মুসল্লিয়ান! ইতিকাফ সংক্রান্ত তাৎপর্য হলো, সৃষ্টজীব থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যে নিজকে আবদ্ধ করে নেয়া। আর আল্লাহ সম্পর্কে বান্দার জ্ঞান যত বাড়বে, আল্লাহর মহব্বত হৃদয়ে যত পোক্ত হবে, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে যতটুকু অগ্রসর হবে, দুনিয়ার প্রতি প্রেম ভালোবাসা ততই অর্ন্তহিত হবে।

ইতিকাফ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে পালিত জিবরীল আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। জিবরীল আ. প্রতি রমজানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন শুনাতেন এবং নিজেও তাঁর থেকে শুনতেন। আর যে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাত হয় সে বছর তিনি দু’বার কুরআন শুনান এবং শোনেন (বুখারী ও মুসলিম)।

ইবনে আব্বাস রাযি.এর বর্ণনায় বুখারীতে আরো এসেছে :
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক দানকারী ছিলেন, তবে তিনি সবচে’ বেশি দান করতেন যখন জিবরীল আ. তাঁকে কুরআন শুনাতেন। আর জিবরীল আ. রমজানের প্রতি রাতেই তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শেখাতেন। যখন জিব্রিল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি বেগবান বাতাস থেকেও অর্থকড়ি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অধিক দানশীল হতেন’ (বুখারী ও মুসলিম)।

ইতিকাফ, ইতিকাফ, ইতেকাফ

ইতিকাফ সংক্রান্ত ফজিলত

রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর যেকোনো একটিতে শবে কদর রয়েছে। আর শবে কদরের ইবাদত তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই ইতিকাফ করতেন। তিনি প্রথম দশকেও ই’তিকাফ করেছেন, মধ্য দশকেও করেছেন, এরপর শেষ দশকেও ইতিকাফ করেছেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন: ‘আমি প্রথম দশকে ই’তিকাফ করেছি, এরপর মধ্য দশকে, এরপর আমাকে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তা শেষ দশকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যার ইতিকাফ করা পছন্দ হয় সে যেন ইতিকাফ করে (মুসলিম)।

রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ করা কখনো বাদ দেননি। তিনি প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। আর যে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াফাত ফরমান, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। উপরন্তু যখন তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতে প্রতিযোগিতা শুরু করলেন, তিনি ইতিকাফ করা ছেড়ে দিলেন এবং তা শাওয়ালের প্রথম দশকে কাজা করে নিলেন (বুখারী)।

ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই ইতিকাফ  পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। ইতিকাফ ঈমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। ই’তিকাফ অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয়  থেকে আলাদা করে নেয়।  ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ইতিকাফ  ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌছেঁ দেয়ার চেষ্টা করা।

আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইবরাহিম আ. ও ইসমাইল আ.  এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে :

এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।” ( সূরা বাকারা : ১২৫)

ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা-আলা বলেন :

وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ.  سورة البقرة ১৮৭
আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।” ( সূরা বাকারা : ১৮৭)

ইবরাহিম আ.  তাঁর পিতা এবং জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভর্ৎসনা করতে যেয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তা-আলা তা উল্লেখ করে বলেন:

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ سورة الأنبياء
“যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: “এই মূর্তিগুলো কি, যাদের পূজারি (ইতিকাফকারী) হয়ে তোমরা বসে আছ” ?  (সূরা আম্বিয়া : ৫২)

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য হাদিস ই’তিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করা হল।

আয়েশা রাদি-আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। [ বুখারি ও মুসলিম]

আয়েশা রাদি-আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানে ইতিকাফ করতেন।  (বুখারি ২০৪১)

অন্য এক হাদিসে রাসূল [সঃ] বলেন—
আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে [কদরের রাতের সন্ধানে] রমজানের প্রথম দশে ইতিকাফ পালন করি। অত:পর ইতিকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ইতিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে ইতিকাফ পালন করল।  ( বুখারি)

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন ইতিকাফ  করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশ দিন এতেকাফে কাটান।( বুখারি)

আবু হুরাইরা  রা. হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়। আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর পরলোকগত হন তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। ( বুখারি)

আয়শা রাদিয়াল্লাহু  আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও ইতিকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজা  অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে। ( বুখারি)

ইতিকাফ, ইতিকাফ, ইতেকাফ

ইতিকাফের উপকারিতা

ই’তিকাফ পালনকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরাইরা রাদি-আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে  রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।

ই’তিকাফ পালনকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের  কারণে আল্লাহ তা-আলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।

ই’তিকাফ পালনের ফলে আল্লাহ তা’আলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়,এবং আল্লাহ তা’আলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন: আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সুরা আজ-জারিয়াত: ৫৬]

আর  ইবাদতের বিবিধ  প্রতিফলন ঘটে ই’তিকাফ অবস্থায়। কেননা ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যকুল হয়ে পড়ে।  আল্লাহ তা-আলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন:

বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩]

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে- বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি যখন সে  প্রার্থনা করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মান্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সম্ভবত তারা পথ প্রাপ্ত হবে। (আল-বাকারা : ১৮৬)

ই’তিকাফ অবস্থায় যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে— যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর  মাধ্যমে,  কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে  অভ্যস্ত করানো  হবে  সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে— মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে  ভালোবাসবে,  সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা, এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছিলেন:

أرحنا بها يا بلال، أرحنا بها يا بلال
নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল, নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল।

মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের  অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয়  দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে  রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে ই’তিকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে ইতিকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে  ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়।  কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না।  আর মানুষের  প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও ই’তিকাফ করার আরো অনেক ভালো দিক আছে –
ই’তিকাফ করার মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
ই’তিকাফ অবস্থায় বেশি বেশি  কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ই’তিকাফ অবস্থায় রাত্রিতে ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়।
ই’তিকাফ অবস্থায় শেষ রাতে তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
ই’তিকাফ অবস্থায় সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।

 

ইতিকাফ, ইতেকাফ, এতেকাফ

ইতিকাফ সংক্রান্ত আহকাম

রাসূল্ল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসরণ করে ইতিকাফ করার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা।

নিয়ত করে ইতিকাফ শুরু করে দেয়ার পর ইতিকাফ পূর্ণ করা জরুরী নয়।

কমপক্ষে কত দিন ইতিকাফ করলে ইতিকাফ হিসেবে ধরা হবে, বিষয়টি অনির্দিষ্ট। তবে ইতিকাফকারী যেদিন থেকে ই’তিকাফ শুরু করতে ইচ্ছুক, সেদিন সূর্যাস্তের পূর্বেই তাকে নিজ ইতিকাফ করার জায়গায় পৌঁছে যেতে হবে।

ইতিকাফ করার জন্য নিজের জন্য একটা জায়গা বেছে নেয়া জরুরী, যেখানে নীরবে আল্লাহর যিকর-আযকার করতে পারবে। প্রয়োজনের সময় আরাম করতে পরবে। কাপড় পরিবর্তন করতে পারবে। পরিবারের কেউ এলে তার সাথে সাক্ষৎ করতে পারবে।

ইতিকাফ পালনকারী মসজিদের বিভিন্ন প্রান্তে নফল নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে ইতিকাফ পালনকারীর জন্য উত্তম হলো অধিক নড়াচড়া ও নফল নামাজ না পড়া। এর প্রথম কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নিজকে লুকিয়ে রাখা যায়, মসজিদের অভ্যন্তরে এমন একটি জায়গা তৈরি করে নিতেন। আর দ্বিতীয় কারণ যখন কেউ নামাজ পড়ার জায়গায় বসে থাকে তখন ফেরেশতারা তার প্রতি রহমত বর্ষণের দু‘আ করতে থাকে (বুখারী)।

ইতিকাফ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী মিলিত হওয়া, চুম্বন,স্পর্শ নিষেধ। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :

وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِد
‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না’ (সূরা আল-বাকারা : ১৮৭)।

ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে।

মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা, প্রস্রাব, পানাহার – যদি তা মসজিদে পৌঁছে দেওয়ার মত কেউ না থাকে। অনুরূপভাবে যে মসজিদে ইতিকাফ করা হচ্ছে তাতে যদি জুমার নামাজ না হয়, তাহলে জুমা আদায়ের জন্য অন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি আছে।

এমন সব নেক-আমল বা ইবাদত-বন্দেগীর জন্য বের হওয়া যাবে না, যা ই’তিকাফ পালনকারীর জন্য অপরিহার্য নয়। যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজায় অংশ নেয়া ইত্যাদি। তবে যদি ইতকিাফ করার শুরুতে এ জাতীয় কোনো শর্ত করে নেয়া হয়, তবে তার কথা ভিন্ন।

এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা ই’তিকাফ বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। ইতিকাফ অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

 

ইতিকাফ

ইতিকাফ পালনের উদ্দেশ্য

 

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা  যখন অন্তর সংশোধিত ও ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের  পথ,  কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে  ইতিকাফ হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল  তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা  ও তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।

পাশবিক প্রবণতা  এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকা
রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তা-আলা তাঁর  বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ  থেকে, অনুরূপভাবে তিনি  ইতিকাফ পালনের বিধানের মাধ্যমে  তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ,  ও অধিক ঘুম হতে ।

ইতিকাফ করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে  আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদির নির্বাধ চর্চার মাধ্যমে  আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।

শবে কদর তালাশ করা
ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি রা. থেকে  বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি এই (কদর) রজনী  খোঁজ করার উদ্দেশে, অতঃপর ইতিকাফ করেছি মাঝের দশকে, অত:পর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম , তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইতিকাফ করতে চায় সে যেন ইতিকাফ করে, অত:পর  লোকেরা তাঁর সাথে ইতিকাফ করল। [মুসলিম:  হাদিস নং ১১৬৭]

মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা
ই’তিকাফ করার মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদিস অনুযায়ী  যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা-আলা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা

দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা
ইতিকাফ পালনকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব  থেকে সরে এসে নিজেকে  মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে।  ই’তিকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে  বিচ্ছিন্ন   হয়ে পড়ে, ঠিক ঐ আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।

প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

কেননা ইতিকাফ  দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে উঠে। ইতিকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে।  ইতিকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়।  যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।

ইতিকাফ, ইতিকাফ, ইতেকাফ

ই’তিকাফ জিজ্ঞাসা 

প্রশ্ন : ই’তিকাফ কী? এর হুকুম কী?
উত্তর : দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়ে থাকে।
ইতিকাফ করা সুন্নাত।

প্রশ্ন : ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : দুনিয়াদারীর ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া, বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন : ই‘তিকাফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ আবশ্যক?
উত্তর : (ক) মুসলমান হওয়া, (খ) জ্ঞান থাকা, (গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া। (ঘ) মসজিদে ই’তিকাফ করা।কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই’তিকাফ শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন  : ই‘তিকাফের রুকন কয়টি ও কী কী?
উত্তর : এর রুকন ২টি : (ক) নিয়ত করা, (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন : মেয়েরা কি নিজ বাসগৃহে ই’তিকাফ করতে পারবে?
উত্তর : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নারীরা মসজিদে ই’তিকাফ করতেন।

প্রশ্ন : ই’তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ নিষিদ্ধ?
উত্তর : তাহল :(১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা, (২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ই’তিকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

ইতিকাফ, ইতেকাফ

ইতকাফ বিষায়ক সুন্দর আলোচনা

প্রশ্ন : বিশেষ প্রয়োজনে ই’তিকাফ অবস্থায় মাসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?
উত্তর : মাসজিদের গণ্ডির মধ্যে ব্যবস্থা না থাকলে শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে প্রস্রাব-পায়খানা, খাওয়া-দাওয়া ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে,
ইতিকাফ অবস্থায় এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী সাফিয়া রাদ্বি আল্লাহু আনহা কে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। (বুখারী)

প্রশ্ন  : কী কী কারণে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?
উত্তর : নিু বর্ণিত যে কোন একটি কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।

প্রশ্ন : ই’তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ করা বৈধ অর্থাৎ মুবাহ?
উত্তর : ইতিকাফকারীদের জন্য নিুোক্ত কাজ করা বৈধ :
১. একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা।
২. চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৩. মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।

Youtube

ইতেকাফ নিজ ঘরে আদায় | ভিডিও

প্রশ্ন : ই’তিকাফকারীর দায়িত্ব ও করণীয় কাজ কী কী? এবং তাঁর কী ধরনের ইবাদত করা উচিত?
উত্তর : উত্তম হল নফল ইবাদত বেশী বেশী করা। যেমন সলাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা, যিক্র-আযকার ও তাসবীহ, তাহলীল করা অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দু‘আ, দুরূদ ইত্যাদি ইবাদতে সর্বাধিক সময় মশগুল থাকা। তাছাড়া শরীয়া বিষয়ক ইলম চর্চা করা।
পার্থিব ব্যাপারে কথাবার্তা বলা, অনর্থক গল্পগুজব ও আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে পারিবারিক কল্যাণর্থে বৈধ কোন বিষয়ে অল্পস্বল্প কথাবার্তা বলার মধ্যে কোন দোষ নেই।

প্রশ্ন : ই’তিকাফ শুধুই রমযান মাসে? নাকি অন্য সময়ও করা যায়?
উত্তর : বৎসরের যে কোন সময় ইতিকাফ করা যায়। এজন্য নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ নেই। যিনি যখন চাইবেন তখনি ইতিকাফ করতে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার শাওয়াল মাসেও ইতিকাফ করেছেন। ‘উমার রাদিআল্লাহু আনহু একবার মাত্র এক রাত ইতিকাফ করেছিলেন।

প্রশ্ন : ই‘তিকাফের জন্য কোন্টি উত্তম সময়?
উত্তর : রমযান মাস হচ্ছে ই‘তিকাফের উত্তম সময়। আরো উত্তম হচ্ছে রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা।

প্রশ্ন  : সর্বনিু কী পরিমাণ সময় ইতিকাফ করা যায়?
উত্তর : এটি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। শাইখাইনের মতে ই‘তিকাফের ন্যূনতম সময়সীমা ১দিন। কেননা, হানাফী মতে ই‘তিকাফের জন্য রোযা শর্ত। আর রোযা ১ দিনের কমে পূর্ণ হয় না।

প্রশ্ন : ইতিকাফ কখন শুরু ও শেষ করব?
উত্তর : ফযরের সলাত আদায় করে বা সূর্যাস্তের পর ই‘তিকাফে প্রবেশ করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। আর শেষ করবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।

ইতেকাফ, ইতিকাফ

ইতিকাফ | ডঃ জাকির নায়েক

প্রশ্ন  : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ইতিকাফ করেছেন?
উত্তর : প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন ২০ দিন। এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন বছরই তিনি ইতিকাফ থেকে বিরত থাকেননি। (বুখারী)

প্রশ্ন  : ইতিকাফ কত প্রকার ও কী কী?
উ: ইসলামী শরীয়তে ই’তিকাফ ৩ প্রকার।
(ক) ওয়াজিব ই’তিকাফ : ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ওয়াজিব ইতিকাফ হলো মানতের ইতিকাফ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।” (সূরা হাজ্জ : ২৯)

(খ) সুন্নাত ই’তিকাফ : রমযানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন :

(গ) মুস্তাহাব ইতিকাফ : উল্লেখিত দু’প্রকার ব্যতীত বাকী সব মুস্তাহাব ইতিকাফ।

পোস্ট রিলেটেড সুন্দর দুটি বই 〉

১। তারাবীহ ও ইতেকাফ

download

২। যাকাত, সাওম ও ইতেকাফ

download

রেফারেন্স: প্রশ্নোত্তরে সিয়াম

লেখক : অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া মজুমদার
প্রণয়নে :এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

পরিমার্জনে :

ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া মজুমদার
সভাপতি, আল-ফিক্হ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ড. হাফেয আবদুল জলীল
গবেষণা কর্মকর্তা, ইসলামী বিশ্বকোষ বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
কাজী মুহাম্মাদ ইবরাহীম
হেড মুহাদ্দিস, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা, নরসিংদী

_________________________________________________________________________________

রমাদান সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন রমাদান

FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST