গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজগুলোর অন্যতম হলো ইশরাকের নামাজ। ইশরাক অর্থ হলো ‘উদয় হওয়া’ বা ‘আলোকিত হওয়া’। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্যোদয়ের পর সূর্যের পূর্ণ কিরণ বিচ্ছুরিত হওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তা-ই ইশরাক। ইশরাক নামাজের ফলে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। হাশরের দিন এ নামাজের ফলে মুমিনদের আমলনামা ভারী হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি ইশরাক নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে পড়বে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।

সুন্নাত ও নফল নামাজগুলো আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়। ফরজের ঘাটতিগুলোও পূরণ করবে সুন্নাত ও নফল নামাজ। এ প্রসঙ্গে রসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নয়তো সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন ফরজ নামাজে কোনো কমতি দেখা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আর সব আমলের হিসাব অনুরূপ গ্রহণ করা হবে (তিরমিজি)।

ইশরাক, চাশত বা সালাতুল দুহা এই  ৩টি ই একই নামাজ। সূর্য ওঠার পর একটু দেরি করে পড়লে সেটাকে চাশতের নামাজ বলা হয় এবং একটু আগে পড়লে সেটাকে ইশরাকের নামাজ বলা হয়। অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পরপরই যদি আপনি নফল নামাজ পড়ে থাকেন, তাহলে সেটা এশরাকের নামাজ এবং সূর্য উদয়ের কিছুটা সময় পরে যদি আপনি আদায় করেন, যখন নাশতার সময় হয়ে যায় অথবা সূর্য একটু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন সেই নামাজ চাশতের নামাজ হয়ে যাবে। আবার কোনো কোনো হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুল (সা.) একে আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। সব নামাজ একই। একই বক্তব্য, একই কথা, শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে নামের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে।

ওয়াক্তের কারণে দুটির ফজিলতের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। ফজিলতের বিষয়েও ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। আবার ইশরাকের নামাজ পড়লেই যথেষ্ট, আপনাকে আর চাশতের নামাজ আদায় করতে হবে না। তবে আপনি চাইলে ইশরাক ও চাশত দুই নামাজ দুই ওয়াক্তে আদায় করতে পারবেন, এটি জায়েজ রয়েছে।

ইশরাক ও চাশতের নামাজের ফজিলতঃ

সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতেন। এ সময় দোয়া, তাসবিহ পাঠ ও দ্বিনি আলোচনা করতেন। সূর্যোদয়ের পর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এই আমলের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)

সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে দুহার নামাজ আদায় করা হয়। পৃথকভাবে আদায় করার অবকাশ থাকলেও অনেকেই এটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা বা চাশতের নামাজ।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয়তম (রাসুল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ তথা ইশরাক বা চাশতের নামাজ ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)

 

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজ এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২২২)

 

প্রশ্ন : একই দিনে এশরাক ও চাশতের নামাজ আদায় করা যাবে কি? এই নামাজ কি নিয়মিত পড়তে হবে নাকি মাঝেমধ্যে পড়লেও হবে?

উত্তর : প্রথম কথা হচ্ছে, এশরাক ও চাশত দুটি একই নামাজ। সূর্য ওঠার পর একটু দেরি করে পড়লে সেটাকে চাশতের নামাজ বলবেন এবং একটু আগে পড়লে সেটাকে এশরাকের নামাজ বলবেন। অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পরপরই যদি আপনি নফল নামাজ পড়ে থাকেন, তাহলে সেটা এশরাকের নামাজ এবং সূর্য উদয়ের কিছুটা সময় পরে যদি আপনি আদায় করেন, যখন নাশতার সময় হয়ে যায় অথবা সূর্য একটু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন সেই নামাজ চাশতের নামাজ হয়ে যাবে। আবার কোনো কোনো হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুল (সা.) একে আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। সব নামাজ একই। একই বক্তব্য, একই কথা, শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে নামের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে।

আবার ওয়াক্তের কারণে দুটির ফজিলতের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। ফজিলতের বিষয়েও ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। আবার এশরাকের নামাজ পড়লেই যথেষ্ট, আপনাকে আর চাশতের নামাজ আদায় করতে হবে না। তবে আপনি চাইলে এশরাক ও চাশত দুই নামাজ দুই ওয়াক্তে আদায় করতে পারবেন, এটি জায়েজ রয়েছে।

তার পরের মাসআলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, নফল বা অন্য অতিরিক্ত ইবাদত যেগুলো আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে নিয়মিত আদায় করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে যে আমলটি নিয়মিত করা হয়ে থাকে, সেটি যদিও কম হয়।’ তাই আপনি যদি এটি নিয়মিত করেন, তাহলে আপনার এই আমলটুকু আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমলে পরিণত হবে। এই জন্য নফল আমল বা অতিরিক্ত আমল কম করে হলেও আমরা নিয়মিত আদায়ের চেষ্টা করব, এটি হচ্ছে রাসুলের (সা.) সুন্নাহ। আল্লাহর নবী (সা.) কোনো নফল আমল শুরু করেন, কোনো কারণবশত হলেও মৃত্যুর আগপর্যন্ত সেই আমলকে তিনি ছেড়ে দেননি, বরং নিয়মিত সেই আমল করেছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, নবী (সা.) মূলত নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন, এটি সুন্নাহর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ যদি কোনোভাবে এই নফল আমলটুকুর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন না। নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে গুনাহর মাস’আলাই আসবে না।

 

ইশারক নামাজের সঠিক সময়ঃ

ইশরাকের সময় হলো, বেলা ওঠার ১৫ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত সময়। তবে উত্তম হলো, বেলা ওঠার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ইশরাক পড়া ।


ইসলাম সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন  ☑

FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST 
আত্তাহিয়াতু