হালাল বলতে আমরা সাধারণত  যাবতীয় বৈধ পন্থাকেই বুঝি। যা কল্যানকর ও হিতকর এবং যাবতীয় অবৈধ ও অকল্যাণকর হতে মুক্ত। ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে উপার্জনের জন্যে উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং যাবতীয় বৈধ ও অবৈধ পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। অতএব হালাল উপার্জন বলতে বুঝায় উপার্জনের ক্ষেত্রে বৈধ ও শরীআত সম্মত পন্থা অবলম্বন।

হালাল উপায়ে জীবিকা উপার্জনের ফলে সমাজ ব্যবস্থায় ধনী দরিদ্রের মাঝে সুষম ভারসাম্য ফিরে আসে; কৃষক দিন মজুর, ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিক-মালিক এবং অধস্তনদের সাথে উর্ধ্বতনদের সুদৃঢ় ও সংগতিপূণ সর্ম্পক তৈরী হয়। ফলে সকল শ্রেণীর নাগরিকই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় এবং সমাজ সংসারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস।

মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোযা, যাকাত প্রভৃতির উপরই সীমাবদ্ধ নয়। জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপ রেখার প্রণেতা হিসেবে ইসলামে রয়েছে জীবন ধারনের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও অন্যতম একটি মৌলিক ইবাদত। শুধু তাই নয়, ইসলাম এটিকে অত্যাবশ্যক (ফরয) কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আল্লাহ পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। ইসলাম পবিত্র ধর্ম। পবিত্র বিশ্বাস এবং পবিত্র কর্মই ইবাদত। ইমানের প্রথম বাক্য হলো কালেমা তাইয়েবা, এর মানে হলো পবিত্র বাণী। যার মাধ্যমে মানুষ পবিত্র জীবনে প্রবেশ করে। সুতরাং একজন বিশ্বাসী অনুগত বান্দা সারা জীবন এই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। পবিত্র বস্তু ছাড়া আল্লাহ কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হারাম দ্বারা পুষ্ট দেহ জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ ও দারামি)।

মানুষ জীবনে যা যা ভোগ বা উপভোগ করে, সবই তার রিজিক। হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ওই রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।

নবী–রাসুলরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, তাঁরা নিষ্পাপ। তবু আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)।

অতঃপর সকল বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭২)।

হালাল সম্পদকেও প্রতিবছর হিসাব করে জাকাত প্রদানের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়। সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে বৈধ সম্পদও হারাম হয়ে যায়। অজু-গোসল বা পবিত্রতা ছাড়া যেমন নামাজ শুদ্ধ হয় না, ঠিক তেমনি হালাল জীবিকা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হালাল হবে না, অনুরূপ হালাল বস্তু হারাম পন্থায় লাভ করলে তাও হালাল বা বৈধ হবে না।

হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ ইবাদত। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)। ‘সকল মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ।’ (জামিউল আখবার: ১০৭৯)। ‘হালাল উপার্জন একটি জিহাদ।’ (কানযুল উম্মাল: ৯২০৫)।

 

হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।’ (জামিউল আখবার: ৩৯০)।

 

যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৫)।

 

যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে হালাল রিজিক আহার করল, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা থাকবে, সে যেখান দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৭)।

 

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে নবীগণের সঙ্গে শামিল হবে এবং অনুরূপ পুণ্য লাভ করবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৮)।

 

হালাল রিজিক ও সৎ উপার্জনের সব প্রচেষ্টাই ইবাদত। জীবিকার জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন। শ্রমিক তাঁর মনিবকে ফাঁকি দিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। মনিব তাঁর শ্রমিককে ঠকালে, ন্যায্য পাওনা না দিলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না। কর্মচারী মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না, মালিক তাঁর কর্মচারীর প্রতি জুলুম ও অবিচার করলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না।

ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দিলে, ওজনে বা পরিমাণে কম দিলে, নকল পণ্য বিক্রি করলে; মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনোভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, তবে তাঁর রিজিকও হালাল হবে না।

 

কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই সকল লোকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা মানুষ থেকে গ্রহণ করার সময় ঠিকমতো নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা-৮৩ মুতাফ্‌ফিফিন, আয়াত: ১-২)।

 

সৎ ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক, শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজা)।

 

আল্লাহ বলেন, হে ইমানদাররা, তোমরা নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনের অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করও না (বাকারা ২৩)।

 

হালাল উপার্জন করতে হলে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়। বসে বসে অবৈধ উপায়ে উপার্জনে তেমন কষ্ট করতে হয় না; কিন্তু হালাল উপার্জনের জন্য তিলে তিলে সময়, শ্রম, মেধা ব্যয় করতে হয়। এতে মানুষের কর্মবিমুখতা দূর হয়। তাই বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, তোমরা ফজরের সালাত আদায় হয়ে গেলে জীবিকা অনুসন্ধান না করে ঘুমিয়ে পড়বে না।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত উমর (রা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন জীবিকার্জনের চেষ্টায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসে না থাকে। পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল এসেছেন, তারা সবাই নিজ হাতে হালাল উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তাই হালাল উপার্জন সব নবী-রাসূলের সার্বজনীন সুন্নাত।

হালাল উপার্জন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হালাল ছাড়া অন্য উপায়ে অবৈধভাবে উপার্জনের সম্পদ দ্বারা যে শরীর বা প্রজন্ম গড়ে উঠবে, তা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। তা দিয়ে নিজের দুনিয়ার জীবন ধ্বংস হবে, পরিবার-পরিজনের জীবন নষ্ট হবে- আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। কাজেই হালাল উপার্জনে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

কোন মানুষের সাধ্য নেই, আল্লাহ যে রিযক নির্ধারণ করেছেন, তাতে সামান্য রদবদল বা পরিবর্তন করা। কিন্তু এটা ঠিক যে, আল্লাহ যার জন্য যে পরিমাণ রিযকের আসবাব নির্ধারণ করেছেন, তাকে সে পরিমাণই তিনি রিযক প্রদান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :

তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিয্ক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান। সূরা মুলক : (১৫)

তিনি অন্যত্র বলেন :

তাই আল্লাহর কাছে রিয্ক তালাশ কর, তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। সূরা আনকাবুত : (১৭)

রিযকের জন্য আসবাব গ্রহণ বা তার জন্য চেষ্টা-তদবির করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযক নির্ধারিত না হওয়া প্রমাণ করে না। এ পার্থিব জগতের সাধারণ নিয়মে আল্লাহ কাউকে সরাসরি রিযক প্রদান করেন না, এ দুনিয়া দারুল আসবাব বা উপায় অবলম্বনের জগত, সবাইকে তিনি রিযকের জন্য উপায় অবলম্বনের নির্দেশ দেন, যেমন মারইয়াম আলাইহাস সালামকে দিয়েছেন :

আর তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা পাকা খেজুর ফেলবে’। সূরা মারইয়াম : (২৫)

আল্লাহ চাইলে নাড়া ব্যতীতই তার নিকট খেজুর পড়ত, কিন্তু তিনি তাকে আসবাব গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সকলের কর্তব্য রিযকের আসবাব গ্রহণ করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা।

রিযকের জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা এবং হালাল রিযকের উপায় অবলম্বন করা ও হারাম থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তার ইচ্ছা ও হিকমতের দাবি অনুসারে প্রত্যেককে রিযক প্রদান করেন। অতএব যার জন্য আল্লাহ যে পরিমাণ রিযক নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।সূরা তালাক : (২-৩)

তিনি আরো বলেন :

আর আল্লাহ যদি তার বান্দাদের জন্য রিয্ক প্রশস্ত করে দিতেন, তাহলে তারা যমীনে অবশ্যই বিদ্রোহ করত। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণে যা ইচ্ছা নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত, সম্যক দ্রষ্টা। সূরা শুরা : (২৭)

ইবনে কাসির রহ. বলেছেন : কিন্তু আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে সে পরিমাণ রিযক প্রদান করেন, যাতে তার কল্যাণ নিহিত। এ ব্যাপারে তিনিই বেশী জানেন। অতএব যে সম্পদের উপযুক্ত তাকে তিনি সম্পদ দান করেন। আর যে অভাবের উপযুক্ত তাকে তিনি অভাবে রাখেন।

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।সূরা তালাক : (২-৩)

 

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের গুরুত্ব ইসলামে যেমনি রয়েছে, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও অত্যাধিক। ইসলাম মানুষের জন্য যাবতীয় জীবনোপকরণকে সহজসাধ্য, সুস্পষ্ট, ও পবিত্র করার নিমিত্বে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা দিয়েছে। অতএব নির্দেশনা বহির্ভূত যাবতীয় উপার্জনই হারাম বা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের বক্তব্য হল মানুষকে নিজের সার্মথ্য ও যোগ্যতানুযায়ী নিজেই নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর সন্ধান করবে। এটি মানুষের অন্যতম অধিকার। তবে ইসলাম মানুষকে এ অধিকার দেয়নি যে, সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্য স্বীয় খেয়ালখুশিমত যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারবে। তাইতো ইসলাম অর্থসম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যাক্তির জন্য কল্যানকর যাবতীয় ব্যবস্থাকে ইসলাম হালাল করেছে। নিম্নে এ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল:

এক. হালাল উপার্জন একটি অলঙ্ঘনীয় বিধানঃ 

ইসলাম মানুষের জন্য হালাল ও হারামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপন করেই শেষ করেনি, বরং হালাল উপার্জনে রয়েছে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা। ফরজ ইবাদত সমূহের আদায়ের পর এ মহতি কর্মে ঝাপিয়ে পরতে উৎসাহিত করা হয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও বৈধ উপায় অবলম্বন করা ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের উপর ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের প্রশ্নে সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদের ব্যপারে নবী করিম সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেন:

«يأتي على الناس زمان، لا يبالي المرء ما أخذ منه، أمن الحلال أم من الحرام»

‘‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন ব্যক্তি কোন উৎস থেকে সম্পদ আহরন করছে, তা হালাল না হারাম, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না।’’[4]

 

দুই. হালাল উপার্জন দু’আ কবুলের পূর্বশর্তঃ

মানুষের প্রত্যহিক ও জাগতিক জীবনের চাহিদার কোন অন্ত নেই। তবে এগুলো মানুষের কাঙ্খিত ও বাঞ্চিত হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মহান স্রষ্ট্রার অনুগ্রহের, ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। আর এর জন্য প্রয়োজন একান্তে তাঁর দরবানে আরাধনা করা। মহান আল্লাহ ও মানুষে এ ব্যপারে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এটি অন্যতম ইবাদত ও বটে। রাসূল সা. বলেন :

‘‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত’’[5] অতএব দুআ ইসলামে অন্যতম একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর গভীর প্রেম নিবেদন করা চলে এবং যাবতীয় প্রয়োজন পূনণে সহায়ক হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মটি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেননা, অতএব অবৈধ উপার্জন যারা করে তাদের খাদ্যের উপার্জন হয় অবৈধ অর্থে হওয়ায় ইসলম যাবতীয় রক্ত গোশত সবই হারাম দ্বারা পুষ্ট হয়। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির প্রার্থনাকে ইসলামে কখনো সমর্থন করেনা। এ মর্মে রাসূল সা. বলেন:

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূল সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’’[6]

ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা হল। ‘‘হে মানবমন্ডলী ! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী ভক্ষন কর।’’ তখন সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লহর কাছে দু’আ করুন যেন আমার দু’আ কবুল হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সা‘দ, তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তোমার দু’আ কবুল হবে।’’[7]

 

তিন. হালাল উপার্জনে বরকত লাভ হয়ঃ

উপার্জনে বরকত লাভ করতে হষে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেকেই বরকত মন্ডিত করেন। এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের বারকত নষ্ট করে দেন। আর যেখানে অপচয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্পদের প্রাচুর্যতা লাভে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে বরকতের কারণে খুব স্বল্প সময়েই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

চার. হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়ঃ

মানুষের দু’টি জীবন রয়েছে, একটি ইহলৌকিক, অপরটি পরলৌকিক। অতএব হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যাক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাস্তি অপেক্ষা করছে।

 

পাঁচ. অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জনকারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিতঃ

ইবন আব্বাস রা.বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ

‘‘আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম।’’[8]

কাব ইবন উজরাহ রা. রাসূলে কারীম সা. থেকে বর্ণনা করেন:

«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِحَرَامٍ»

‘‘যে শরীর হারাম পেয়ে হরষ্ট পুষ্ট হয়েছে, তা জান্নাতে যাবে না।’’[9]

দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের উপর ভিত্তি করে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য পুরুস্কার ও শাস্তি উভয়ের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যারা তাঁর অনুগত বান্দা তারাই পুরুস্কার প্রাপ্ত হবে। যেহেতু অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারী ব্যক্তি তার অবাধ্য ও দুশমন তাই তাদের জন্য ও শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। অতএব এ পন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি জাহান্নামী।

 

ছয়. হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের শর্তঃ

অর্থ-সম্পদ দ্বারাই মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে, খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে তার দেহের বৃদ্ধি ঘটে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ হয়। কিন্তু এ উপকরণ ক্রয়ের অর্থ যদি অবৈধ উপায়ে উপার্জিত হয় তবে তা কিভাবে বৈধ শারিরিক বৃদ্ধি হতে পারে। ফলে তার শরীরের রক্তে ও গোশতে অবৈধ বিষয়ের সংমিশ্রন ঘটে। আর এর দ্বারা যত ইবাদতই করা হোক না তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। কেননা আল্লাহ অপবিত্র কোন কিছুই গ্রহণ করে না। অতএব হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হিসেবে শিরোধার্য। সালাত, যাকাত ও হজ্জ ইত্যাদি ফরয ইবাদতসমূহ কবুল হওয়ার জন্র অবশ্যই বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে হবে।

[1] . সূরা আল-বাকারা: 168
[2] .সূরা নিসা:২৯।
[3] . সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৮।
[4] . ইমাম বুখারী, আস-সাহীহ, হাদীস নং ২০৫৯।
[5] . আবু দাউদ, সুনান, হাদীস নং ১৪৭৯।
[6] . ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১০১৫।
[7] . ইমাম তাবারানী, মুজামুল আওসাত, খ. ৬, পৃ. ৩১০
[8] .তাবারানী।
[9]. আবু ইয়ালা, মুসনাদ আবী ইয়ালা, খ.১ পৃ. ৮৪।

 

খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন হালাল উপার্জনের অন্বেষক-

তাঁরা যাবতীয় লেন দেন হালাল পন্থা অবলম্বন করতেন। হারামের ভয়াবহতা সম্পর্কে তারা খুবই সচেতন ছিলেন। আবু বকর রা. এর একটি ঘটনা থেকে তাঁর হারাম বর্জন প্রবণতা ও হালালের বিষয়ে কঠোরতা সহজেই অনুমেয়। বর্ণিত আছে যে, আবু বকর রা. এর এক গোলাম ছিল সে তাঁর সঙ্গে কিছু অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তি পত্র করে। অতঃপর সে যখন প্রতিদিন মুক্তিতপনের কিছু অর্থ নিয়ে আসতো, তখন আবু বকর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, এ অর্থ কিভাবে সংগ্রহ করেছো? যদি সে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারতো, তবেই তিনি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতেন। অন্যথায় ব্যবহার করতেন না। এক রাতে সে আবু বকর রা. এর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সে দিন তিনি রোযা রেখেছিলেন। তাই সেই খাবার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ভুরে যান এবং তা থেকে এক লোকমা খেয়ে ফেলেন। অতঃপর মনে হওয়া মাত্র তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কিভাবে অর্জন করেছ? সে বললোঃ জাহেলিয়াতের আমলে আমি মানুষের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভাল গণক ছিলাম না। তাই মানুষকে শুধু ধোঁকা দিতাম। এই খাবার সেই ধোঁকার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংগৃহীত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ সর্বনাশ তুমি আমায় একি করেছ! অতঃপর তিনি গলায় আঙ্গুল দিয়ে ভমি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে খাবারের কিছুই বের হয়নি। অতঃপর তিনি পানি পান করে ইচ্ছাকৃত বমির মাধ্যমে পেটের সব খাবার বের করে দিলেন। তিনি আরো বললেনঃ উক্ত খাবার বের করতে গিয়ে আমার মৃত্যুর ঝঁকি থাকত তাহলেও তা বের করে ছাড়তাম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যে শরীর হারাম খাদ্য দিয়ে স্বাস্থ্য লাভ করে, তার জন্য জাহান্নাম উপযুক্ত স্থান। তাই আমি ভয় পেয়ে যাই, যে এক লোকমা হারাম খাবার দিয়ে আমার শরীর কিভাবে মোটা-তাজা হতে পারে।’’

ইসলাম কল্যাণকর এক মহতি জীবন ব্যবস্থা এতে যাবতিয় পবিত্র ও উত্তম বিষয় ও বস্ত্তকে বৈধ করা হয়েছে। কেননা বস্তু মাত্রের মাঝেই কিছু কল্যাণ ও কিছু অকল্যাণের সমাহার রয়েছে। গুনাগুণের বিচারে যে বস্ত্ততে মানুষের জন্য কল্যানকর উপাদানের পরিমাণ বেশী, অকল্যানের পরিমাণ কম, সেই গুলোকেই মহান আল্লাহ মানুষের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। আর যে সকল বস্ত্ততে কল্যান কম অথচ অকল্যানের পরিমাণ বেশী, সেগুলোকে মনুষের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (যেমন মদ হারাম হওয়ার কারণ কুরআনে বিধৃত হয়েছে) অতএব, আমাদেরক খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-আষাক এবং বিভিন্ন দ্রব্য সামগী্রর ব্যবহার, এমনকি যাবতীয় আয় উপার্জনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সেগুলো যেন হালাল ও উত্তম হয়। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্নক পদার্থ্য দিয়ে তৈরী অথবা যা মানুষের মানবতা বোধকে ধ্বংস করে অথবা যা মানুষের জন্য পাশবিকতার জন্ম দেয় এবং তার সংযমী স্বভাবকে বিনষ্ট করে! কিংবা যা মানুষের আধ্যাতিক ও নৈতিক ক্ষতির (ব্যধি) কারণ হয়, এসকল বস্ত্ত ও উপার্জন মাধ্যম অবশ্যই পরিহার করতে হবে। তাছাড়া যেসব উপায় দম্ভ, অহংকার জন্ম দেয়, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধকে নষ্ট করে, নিষিদ্ধ ভোগ-বিলাসের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে, জুলুম-স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্নকেন্দ্রিকতার জন্ম দেয়, দুশ্চরিত্রের প্রতিধাবিত করে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই এসব মাধ্যম বর্জন করতে হবে। আমাদের রুজি-রোজগার যখন এসব থেকে পূতপবিত্র হবে তখনই তা হালাল ও সিদ্ধ হবে।

 

আজ প্রায়ই অনেকের মুখে অভিযোগ শোনা যায়- এত দোয়া করছি, তারপরও তো আমাদের অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে না! অথচ একটু চিন্তা-ফিকির করলেই দেখা যাবে, আমাদের সমাজজীবনে হালাল উপার্জনের চিন্তা কতটুকু আছে! বলতে গেলে প্রায় শূণ্যের কোটায় আমাদের হালাল-হারাম বেঁচে চলার মানসিকতা।

সাধারণ অবস্থা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, নিজের মনের বিভিন্ন চাহিদাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হচ্ছে। অথচ মানুষের চাহিদা কুল-কিনারাহীন সমুদ্র। দুনিয়ায় সব আশা পুরণ হবে এ তো অসম্ভব কথা। অথচ এই হরেক রকম চাহিদা পুরা করার জন্য আমাদের প্রতিযোগিতা চলছে নিয়মিত। একটি পরিবারে স্বামীর চাহিদা এক রকম। স্ত্রীর চাহিদা এক রকম। সন্তানের চাহিদা এক রকম। তখন পরিবার প্রধান সবার চাহিদা মেটানোর জন্য ওঠেপড়ে লেগে পড়েন। চিন্তা করেন না এদের অতিরিক্ত চাহিদা পুরা করার জন্য যে উপার্জন করা হচ্ছে তা হালাল না হারাম! বৈধ না অবৈধ। পবিত্র না অপবিত্র। শরিয়তের সীমারেখার ভেতরে না বাইরে। এটা তো সম্পূর্ণ নবীজির কথার বাস্তবায়ন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের এমন এক কাল অতিক্রম করবে, যাতে মানুষ এ কথার চিন্তা করবে না, যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে তা হালাল না হারাম?’ (মিশকাত)

রিযকের বৃদ্ধি-হ্রাস আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। প্রত্যেকের রিযক আল্লাহর কুদরত ও ফয়সালা দ্বারাই নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

‘আর প্রতিটি বস্তুরই ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।’ সূরা হিজর : (২১) 

তিনি আরো বলেন :

‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা করেন রিয্ক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।সূরা আনকাবুত : (৬২)

তিনি আরো বলেন :

তারা কি জানে না, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন রিয্ক প্রশস্ত করে দেন আর সঙ্কুচিত করে দেন? নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।সূরা যুমার : (৫২)

যখন মানুষ হালাল খাবারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। ধৈর্য, অল্পেতুষ্ঠি, যুহদ (দুনিয়া অনাসক্তি), অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া, লোভ-লালসা এবং বিলাসিতা পরিহার এগুলোকে তোয়াক্কা করে না, তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বরকত শেষ হয়ে যায়। যার দরুন বেশিও অল্প মনে হয়। এ ধরনের ব্যক্তির যদি কারুনের ভান্ডারও মিলে যায়, সেটাকেও সে নিতান্ত কম মনে করবে। এটাই কারণ যে, সে যখন এই অবৈধ সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করে তখন তা কবুল হয় না। তা ছাড়া হারাম ব্যাংক-ব্যালেন্স যতক্ষণ পর্যন্ত তার মালিকানায় থাকে ততক্ষণ তার জন্য দোজখের রাস্তা সুগম হতে থাকে।

অবৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ পুরাই ধ্বংস। কোনো কল্যাণ নেই এতে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা হারাম সম্পদ অর্জন করে, যদি তাকে সদকা করে দেয় তবে তা কবুল হবে না। আর যদি খরচ করে তাহলে তাতে বরকত নেই। মৃত্যুর পর রেখে গেলে তবে জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ।’ (মুসনাদে আহমদ)

হারাম সম্পদ কম আর বেশি নয়, এর থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা একমাত্র হালাল খাবার দ্বারাই সমাজজীবন ঠিক থাকে। দোয়া কবুল হয়। সবকিছুতে বরকত হয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে হারাম থেকে বাঁচার এবং হালালের কদর করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


ইসলাম সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন  ☑

FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST 
আত্তাহিয়াতু