থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং হ্যাপি নিউ ইয়ার #নববর্ষ উৎযাপন করা মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়। বরং এটা হচ্ছে বিজাতীয়-বিধর্মীয় কাফির, মুশরিকদের সংস্কৃতি। মনে রাখতে হবে সংস্কৃতির নামে প্রচলিত কিছু রীতিনীতি এবং আচার-আচরন, অনুষ্ঠান ইসলামের মৌলিক চিন্তা বিরোধী।

একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মুসলিম শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর চর্চা করা খাঁটি মুসলিম নয়। তারা হচ্ছে বিজাতীয়-বিধর্মীয় কাফির মুশরিকদের সংস্কৃতির চর্চা করা মিশ্রিত মুসলিম। কাফির, মুশরিক, ইহুদী, খ্রিষ্টানদের (অমূসলিমদের) পালনকৃত উৎসব #নববর্ষ উৎযাপন করা হারাম। কেননা এইগুলো উৎযাপন করা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয়। আর যে সকল বিষয় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয় সে রকম কোন কিছু উৎযাপন করা মুসলিমদের জন্য হারাম। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্পষ্ট করে আমাদের বলে দিয়েছেন:-

“রসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা গ্রহণ কর এবং যা দেননি যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” [সূরা হাশর আয়াত নাম্বার:- ০৭]।

 

সুতরাং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয় এ রকম কোন উৎসব মুসলিমদের উৎযাপন করা যাবে না। কারণ এগুলো বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসব আর মুসলিমদের জন্য বিধর্মীদের অনুসরণ করা সরাসরি হারাম। 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”-[আবুদাউদ: (৩৫১৪)]

ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আল্লাহর কিতাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও সকল আলেম একমত যে, মুশরিকদের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না।”-[মাজমুউলফতোয়া: (২৫/৩২৭)]

কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে কোন কওমের সাথে সামঞ্জস্য রাখল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”-[আবুদাউদ: (৩৫১৪), আহমদ: (৫১০৬)

এ প্রসঙ্গে ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিসের সর্বনিম্ন দাবি তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম, যদি ও হাদিসের বাহ্যিক অর্থের দাবি কুফরি।”-[আলফুরু: (১/৩৪৮)]

ইব্‌নুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এর রহস্য বাহ্যিক সাদৃশ্য মানুষ কে নিয়ত ও আমলের সাদৃশ্যের দিকে ধাবিত করে।” [ইলামুলমুয়াক্কিয়িন: (২/১০৭)] তিনি আরো বলেন: “কিতাবি ও অন্য কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে একাধিক জায়গায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে, কারণ বাহ্যিক সামঞ্জস্য আভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্যের দিকে ধাবিত করে, যখন আদর্শের সাথে আদর্শ মিলে যায়, তখনঅন্তরের সাথে অন্তর মিলে যায়।”

আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা।নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।”-[সূরা বাকারা: ২০৮]

আজ #নববর্ষ উৎসবের নামে অশ্লীলতার প্রসার হচ্ছে। বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদকতা ও অপরাধ একসূত্রে বাধা।অনন্যা অপরাধ ও অশ্লীলতার মধ্যে পার্থক্য হল কোন একটি উপলক্ষে একবার এর মধ্যে নিপতিত হলে সাধারণভাবে যুবক-যুবতী , কিশোর কিশোরী আর এ থেকে বেরোতে পারে না। বরং আরও বেশী পাপ ও অপরাধে নিপতিত হতে থাকে।কাজেই নিজে,নিজের পরিজন ও সন্তানদেরকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন।

আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর,যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফেরেশতাগন, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ দেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্য হন না।আর তাদের যা নির্দেশ দেয়া হয় তা-ই তামিল হয়।” (সুরাহ আত- তাহরীমঃ ০৬)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেক কেই তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্র নেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে, একজন পুরুষলোককে তার পরিবারের ব্যাপারে,একজন মহিলাকে তার স্বামীর সার্বিক ব্যাপারে, একজন পরিচালক তার মালিকের সম্পদের রক্ষক,আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।“ (বুখারি-৮৯৩,মুসলিম-১৮২৯)

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বারংবার বলেছেনঃ “তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন,তারা হল মাদকাসক্ত, পিতামাতার অবাধ্য ও দাইউস, যে তার পরিবারে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়।“ (মুসনাদে আহমাদঃ ২/৬৯)

এখানে ‘দাইউস’ বলতে বোঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি তার স্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয়। নিজকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে রক্ষা করার পাশাপাশি মুমিনের দায়িত্ব হল সমাজের মানুষদেরকে সাধ্যমত উদ্বুদ্ধ করা। অশ্লীলতার প্রসারের ব্যাপারে আল্লাহর ভয়ংকর শাস্তির কথা শুনুনঃ

“যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সুরাতুন নুরঃ ১৯)

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন তাদের দু’টিদিন ছিল, যেখানে তারা খেলা-ধুলা করত।তিনি বললেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা এতে জাহিলি যুগে খেলা-ধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:” নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন:ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা ।” -[আবুদাউদ: (১১৩৪), আহমদ: (১৩২১০), হাকেম: (১১২৪)। বুলুগুল মারাম: (৯৩), ফাতহুলবারি: (৩/১১৩)]

ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিস প্রমাণ করে কাফেরদের উৎসব পালন করা হারাম।কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের জাহিলি দুই ঈদের উপর বহাল রাখেননি।রীতি মোতাবেক তাতে খেলাধুলার অনুমতি দেননি।তিনি বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন।এর দাবি পূর্বের আমল ত্যাগ করা।কারণ বদল করার পর উভয় বস্তুকে জমা করা যায় না।বদল শব্দের অর্থ একটি ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা।” [ফায়দুলকাদির: (৪/৫১১)]

অতএব কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের উৎসব পালন করা, যেমন নববর্ষ ও অন্যান্য উৎসবসমূহ। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরন করা। হে আল্লাহ্‌!!আমাদেরকে সরল পথ দেখান,সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে আপনি নেয়ামত দান করেছেন।তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।


ইসলাম সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন ☑

FACEBOOK | YOU-TUBE | PINTEREST

আত্তাহিয়াতু