ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিঃ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান [বড়দিন-ক্রিসমাস] উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”

যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”

কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যিম রাহিঃ এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।” সূরা যুমার, আয়াত: ৭

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩

 

অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।

আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর যেহেতু এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে ইসলাম ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যে ধর্মের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করে দেয়া হয়েছে; হোক এসব উৎসব সংশ্লিষ্ট ধর্মে অনুমোদনহীন নব-সংযোজন কিংবা অনুমোদিত (সবই রহিত)।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”.
(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৫)

 

কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আচ্ছা ধরুন আপনার কলিজার টুকরা মা কে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলে, এমন টা বলে যে আপনি আপনার মায়ের অবৈধ সত্নান বা, আপনার মায়ের কোন অবৈধ সত্নান আছে, এমন কথা যারা বলে বেড়ায় তাদের সাথে কি আপনি এক সাথে উঠা বসা করবেন? তাদের সাথে কি আপনি গলায় গলায় খাতির রাখবেন? তাদের দাওয়াতে গিয়ে আপনিও গলা মিলিয়ে বলবেন ঠিক ঠিক আমার মায়ের ব্যাপারে আপনাদের যে ধারনা আমি তাতে সাধুবাদ জানাই?

জীবনেও না, বরং আপনার হাতে যদি ক্ষমতা থাকতো আপনি এদের সবাইকে ফাসি দিয়ে মারতেন। এদের সাথে একান্ত প্রয়োজন বাদে জীবনে কোনদিন কোন উঠা বসাতেই থাকতেন না!

কিন্তু হায় আফসোস। আজ ২৫ ডিসেম্বর, খৃষ্ঠানদের বড় দিন। যারা মনে করে আল্লাহর পুত্র সত্নান হচ্ছে যিশু খৃষ্ট, যারা আল্লাহর সম্পর্কে এত্ত বড় অপবাদ দেয়, মুসলিন নাম ধরে তাদের সাথে আপনি কিভাবে এই দিন পালন করেন? কিভাবে এই দিনের ছুটি উদযাপন করেন? কিভাবে এই দিনের বিভিন্ন অফার গ্রহণ করেন, এমন কি নিজেরাও এই দিন উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেটিং অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকেন, এগুলা না করলেও কিভাবে তাদের কে উইশ করেন Merry Christmas? আস্তাগফিরুল্লাহ!

আপনি কি জানেনে এই মেরি ক্রিসমাস মানে কি? মেরি ক্রিসমাস বলতে বুঝায়, আল্লাহর পুত্র যুশুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা, নাউজুবিল্লাহ! ওয়াল্লাহি আপনি তাদের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন যে আল্লাহ এই দিনে পুত্র সত্নান জন্ম দিয়েছে, আমিও তার প্রতি সম্মান জানাই, তোমাদের চিন্তার সাথে আমিও এক মত! নাউজুবিল্লাহ! আপনি কি করছেন? আল্লাহকে গালি দিচ্ছেন? আপনি তো স্পষ্ট কুফরি করছেন, শিরকে আকবড় করে চলেছেন আর দিন শেষে সূরাহ ইখলাস পড়ে ঘোষনা দিচ্ছেন, লাম ইয়ালিদ ওলাম ইউলাদ- আল্লাহ কাউকে জন্ম দেইনি এবং তিনি জন্ম নেন ও নি!

কত বড় মুনাফিক আপনি! একবার বলছেন নামাজে যে আল্লাহ কাউকে জন্ম দেন নি, আবার বড় দিন পালনে, আল্লাহর পুত্র হিসেবে যিশু খৃষ্টের জন্মদিন ও সম্মতি জানাচ্ছেন। আল্লাহর শানের সাথে এ কেমন বেয়াদবী? একবার ও কি আপনার খারাপ লাগছে না! আচ্ছা আপনারা কিভাবে এভাবে দিনের পর দিন আল্লাহ কে গালি দিয়ে যাচ্ছেন? ভাবছেন কই গালি দিচ্ছি? যারা এমনটা করেন তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল কি বলে জানেন?

আর তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। তিনি (তা থেকে) অতি পবিত্র।(১) বরং আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। সবকিছু তারই একান্ত অনুগত। সূরা বাকারা-১১৬

কুরআনের অন্যত্র এসেছে, তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। [সূরা মারইয়ামঃ ৯১-৯৩]

 

এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, মানুষ আমার উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাদের এটা উচিত নয়। মানুষ আমাকে গালি দেয়, অথচ তাও তাদের জন্য উচিত নয়। মিথ্যারোপ করার অর্থ হলো, তারা বলে, আমি তাদের মৃত্যুর পর জীবিত করে পূর্বের ন্যায় করতে সক্ষম নই। আর গালি দেয়ার অর্থ হলো, তারা বলে যে, আমার পুত্র আছে। অথচ স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে আমি পবিত্র।” [বুখারীঃ ৪৪৮২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “কষ্টদায়ক কথা শুনার পর আল্লাহর চেয়ে বেশী ধৈর্যশীল আর কেউ নেই, মানুষ তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, তারপরও তিনি তাদেরকে নিরাপদে রাখেন ও রিযিক দেন।” [বুখারী: ৭৩৭৮, মুসলিম: ২৮০৪]

একটি প্রশ্ন এবং চিন্তাশিল উত্তরঃ

প্রশ্ন: যুক্তরাজ্যের যেসব মুসলমান খ্রিস্টমাস (বড়দিন) এর মৌসুমে খ্রিস্টমাসের দিন অথবা এরপরে নিজেদের বাড়ীতে তাদের মুসলিম পরিবারের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করে তাদেরকে আপনারা কি উপদেশ দিবেন। যেমন- তুর্কি মোরগের রোস্ট তৈরি করা, খ্রিস্টমাস কেন্দ্রিক অন্যান্য নৈশ খাবারের আয়োজন করা। বেলুন ও কাগুজে ফুল দিয়ে নিজেদের বাড়ীঘর সজ্জিত করা। গোপন সান্তা প্রথা পালন করা। সেটা এ রকম- প্রত্যেক আত্মীয় গোপনে উপস্থিত কারো জন্য বিশেষ একটা উপহার নির্বাচন করবে। যার জন্য উপহারটি কেনা হয়েছে তাকে দেয়ার জন্য উপহারটি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবে; কিন্তু তাকে জানাবে না যে, সে কে? (সান্তাক্লজের ব্যাপারে আজগুবি বিশ্বাস অপনোদন করতে গিয়ে গোপন সান্তা প্রথাটি অমুসলিমদের মধ্যে যারা খ্রিস্টমাস পালন করে তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।) এই কাজটি কি হালাল; নাকি হারাম? যদি এ ধরণের অনুষ্ঠানে মুসলমান ছাড়া (আত্মীয়স্বজন ছাড়া) অন্য কেউ হাজির না হয়?

——————-

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। যে উৎসবের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন এটা হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু এর মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। এটা সবার জানা আছে যে, মুসলমানদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া আর কোন উৎসব নেই। সপ্তাহের ঈদের দিন হচ্ছে শুক্রবার। এর বাইরে অন্য কোন ঈদ-উৎসব নিষিদ্ধ। এর বাইরে যে কোন উৎসব হয় বিদআতের মধ্যে পড়বে; যদি আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির আশায় সেটা পালন করা হয়; যেমন-ঈদে মিলাদুন্নবী। অথবা কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যের পর্যায়ে পড়বে; যদি প্রথা হিসেবে সেটা পালন করা হয়; আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নয়। কারণ এ ধরণের বিদআতি উৎসব চালু করা আহলে কিতাবদের কর্ম; যাদের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য আমরা আদিষ্ট হয়েছি। যদি এই উৎসব-ই তাদের উৎসব হয় তখন হুকুম কেমন হবে!

এ মৌসুমে বেলুন দিয়ে ঘর সাজানো কাফেরদের উৎসব পালনে প্রকাশ্য অংশগ্রহণ করার নামান্তর। মুসলমানদের উচিত নয়- এ দিবসগুলো উদযাপন করা, এ উপলক্ষে ঘরবাড়ী সাজ-সজ্জা করা বা খাবার-দাবার প্রস্তুত করা। মুসলমানদের এগুলো করা মানে কাফেরদের উৎসবে অংশ গ্রহণ করা। কাফেরদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম- এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: মুসলমানদের জন্য হারাম কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে সমবেত হওয়া, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টি বিতরণ করা, খাবার বিতরণ করা অথবা কর্মস্থল থেকে ছুটি কাটানো ইত্যাদি।

যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে উক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।”

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর “ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকিম মুখালিফাতু আসহাবিল জাহিম” গ্রন্থে বলেন: তাদের উৎসবের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণের অনিবার্য ফলাফল হলো- অসত্যের অনুসরণ সত্ত্বেও তাদের অন্তরাত্মাকে খুশি করা। এটাকে তারা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং দুর্বল ঈমানদারকে ভাগিয়ে নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে।”

যে ব্যক্তি এগুলোতে অংশ নিল সেটা সৌজন্যের খাতিরে হোক, সম্পর্কের কারণে হোক, লজ্জায় পড়ে হোক অথবা অন্য যে কোন কারণে হোক না কেন সে গুনার কাজ করল। কারণ এটি আল্লাহর দ্বীনের ক্ষেত্রে আপোষ; এতে কাফেরদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ধর্মীয় গৌরব উজ্জীবিত হয়” [শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র, ৩/৪৪]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি জবাব আছে। সেটা হচ্ছে- তাঁকে এমন মুসলমানদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নওরোজ উৎসবে খাবার তৈরী করে; ইপিপফানি, যীশুর জন্মদিন, পবিত্র বৃহষ্পতিবার (Monday, Thursday), পবিত্র শনিবার (Holy Saturday) ইত্যাদি দিবস পালন করে; যারা খ্রিস্টানদের কাছে এমন জিনিসপত্র বিক্রি করে যেগুলো তারা উৎসব পালনে ব্যবহার করে। মুসলমানদের জন্য এসব করা কি জায়েয? নাকি নাজায়েয? তিনি জবাবে বলেন: আলহামদু লিল্লাহ। মুসলমানদের জন্য তাদের উৎসবের কোনকিছুতে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। না, তাদের খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে, না পোশাকে, না গোসলে, না অগ্নি প্রজ্বলনে, না প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা ইবাদত থেকে অবকাশ নেয়ার ক্ষেত্রে, কোন ক্ষেত্রেই নয়। তেমনি ভোজ-অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, তাদের উৎসবের সৌজন্যে বেচাবিক্রি করা, শিশুদেরকে তাদের উৎসবের খেলায় যেতে দেওয়া, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা ইত্যাদি কোনটি জায়েয নয়। মোদ্দাকথা, অর্থাৎ তাদের উৎসবের দিনকে কোন প্রকারে বিশেষত্ব দেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং মুসলমানদের নিকট সে দিনটিও অন্য দিনগুলোর ন্যায়। মুসলমানগণ তাদের উৎসবের কোন বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে না। আর প্রশ্নে যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে- এ বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। বরং কোন কোন আলেমের মতে, এগুলো যারা করে তারা কাফের; যেহেতু এগুলো করার মধ্যে কুফরি নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

অপর একদল আলেম বলেন: “যে ব্যক্তি তাদের উৎসবের দিন কোন পশু জবাই করল সে যেন শুকর জবাই করল।” আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মী দেশের অনুসরণ করে, তাদের নওরোজ বা মেহেরজান পালন করে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং মৃত্যু অবধি এর উপর থাকে তার হাশর তাদের সাথে হবে”।

সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে সাবেত আদ-দাহহাক থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় এক ব্যক্তি ‘বুআনা’ নামক স্থানে (মক্কার নিকটবর্তী) একটি উট জবাই করার মানত করেছিল। এরপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটএসে বলল: আমি ‘বুআনা’ নামক স্থানে একটি উট জবাই করার মানত করেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: সেখানে কি জাহেলী যামানায় কোন মূর্তি ছিল; যে মূর্তির পূজা করা হত? সে লোক বলল: না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: সেখানে কি কোন জাহেলী উৎসব পালন হত? সে বলল: না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার মানত পূর্ণ কর। পাপঘনিষ্ট মানত পূর্ণ করতে হয় না; বনি আদমের সামর্থ্যে যা নেই সে মানত পূর্ণ করতে হয় না।”এখানে দেখা যাচ্ছে মানত পূর্ণ করা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ততক্ষণ পর্যন্ত সে লোককে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁকে অবহিত করা হয়েছে যে, সেখানে কাফেরদের কোন উৎসব পালিত হত না।

তিনি আরও বলেছেন: “পাপঘনিষ্ট মানত পূর্ণ করতে হয় না”। যদি যে স্থানে কাফেরদের উৎসব হত সে স্থানে পশু জবাই করাটাই পাপ হয় তাহলে সরাসরি তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা কোন পর্যায়ের পাপ? বরং খলিফা উমর (রাঃ), সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ তাদের (কাফেরদের) উপর শর্তারোপ করেছিলেন যে, মুসলমান দেশে তারা প্রকাশ্যে তাদের উৎসব পালন করতে পারবে না। তারা গোপনে তাদের ঘরবাড়ীতে সেটা পালন করবে। অতএব, মুসলমানেরা নিজেরা প্রকাশ্যে এসব পালন করাটা কেমন হতে পারে? এমনকি উমর (রাঃ) বলেছিলেন: বিধর্মীদের ভাষা শিখবে না। মুশরিকদের উৎসবের দিন তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করবে না। কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি অবতীর্ণ হতে থাকে।” আর প্রবেশকারীর উদ্দেশ্য যদি হয় প্রদর্শনী বা এ জাতীয় কিছু সেটাও নিষিদ্ধ। কারণ তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়। অতএব, যে ব্যক্তি এমন কিছু করে যা তাদের ধর্মের নিদর্শন, যা করার কারণে তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয় তার ব্যাপারটি কেমন হতে পারে?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুসনাদ ও সুনানসমূহে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”। হাদিসটির সনদ জায়্যিদ (ভাল)। যদি সাধারণ অভ্যাসের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণের বিধান এটা হয় তাহলে তাদের বিশেষ বিশেষ বিষয়ে সাদৃশ্য গ্রহণের বিধান কেমন হবে?…  [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (২/৪৮৭), মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/৩২৯)। সোর্স- islamqa.info

ইসলাম সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন  ☑

FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST 

আত্তাহিয়াতু