“লাইলাতুল কদর কি প্রতি বছর একদিনেই হয় নাকি এই রাতটি স্থানান্তরিত হয়?”

লাইলাতুল কদর কোন্ দিন, এ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিস সামনে রেখে প্রখ্যাত ইমামগণ বেশ কিছু ডিফারেন্ট মতামত দিয়েছেন।
প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি (রাহ.) তাঁর জগদ্বিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’-তে লাইলাতুল কদরের তারিখ নিয়ে আলেমগণের অনেকগুলো মতামত ব্যক্ত করেছেন।

অধিকাংশ আলিমের মতে, এটি রমাদানের শেষ দশকে রয়েছে। তাঁদের পক্ষে দলিল হলো: রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২০২০]

আরেকদল আলেমের মতে, এটি শেষ সাত রাতের কোনো এক রাতে। তাঁদের পক্ষে দলিল হলো: ইবনু উমার (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা রমাদানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান করো। তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষ সাত রাতে অলসতা না করে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৩৬]

আলেমদের বিরাট আরেক জামাত বলেছেন, এটি রামাদানের ২৭ তম রাতে। এই মত দিয়েছেন উবাই ইবনু কা’ব (রা.), ইবনু ‘আব্বাস (রা.), ‘উমার (রা.), ইমাম আবু হানিফা (রাহ.)-সহ অনেকেই। এই মতের পক্ষে দলিল হলো, সাহাবি উবাই ইবনু কা’ব (রা.) কসম খেয়ে বলতেন, ২৭ তম রাতটি লাইলাতুল কদর। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬২]

ইমাম শাফিঈর ব্যাপারে বলা হয়, তিনি ২১ তম রাতকে কদরের রাত মনে করতেন। তাঁর মতের পক্ষে দলিল হলো: আবু সা‘ঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রমাদানের মধ্য দশকে ইতিকাফ করি। তিনি ২০ তারিখ সকালে বের হয়ে আমাদের সম্বোধন করে বলেন, ‘‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিলো; পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান করো। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে ) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে, সে যেন ফিরে আসে।’’ আমরা সবাই ফিরে আসলাম।। আমরা আকাশে হালকা মেঘ খণ্ডও দেখতে পাইনি। (২১ তারিখ রাতের) পরে এমনভাবে মেঘ দেখা দিলো ও জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো। সালাত শুরু করা হলে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম।। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৮৮৯]

মুহাদ্দিসগণ অনেকেই এই হাদিস থেকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, সে বছর কদর হয়েছিলো ২১ তম রাতে। (মুফতি আমিমুল ইহসান (রাহ.) সংকলিত, ড. আব্দুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর (রাহ.) অনূদিত ফিকহুস সুনান গ্রন্থে (১/৪৮০) এই বিষয়টি টীকায় উল্লেখিত হয়েছে)

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস (রা.) ২৩ তম রাতকে কদরের রাত মনে করতেন বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলি, ‘আমি দূরে বনভূমিতে অবস্থান করি এবং আল্লাহর অনুগ্রহে সেখানে নামাজও পড়ি। কাজেই আপনি আমাকে কদরের রাত সম্পর্কে বলে দিন, যাতে আমি সে রাতে আপনার মাসজিদে এসে ইবাদাত করতে পারি।’ তখন তিনি বলেন, ‘‘তুমি রমাদানের ২৩ তম রাতে আসবে।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৮০; হাদিসটি হাসান]

মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম (রাহ.) বলেন, ‘আমি (উপরের হাদিসের বর্ণনাকারী) আবদুল্লাহর পুত্রকে জিজ্ঞাসা করি, তোমার পিতা কী করতেন?’ সে বললো, ‘আমার পিতা রমাদানের (২২ তারিখে) আসরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদে গমন করতেন এবং পরদিন সকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতেন। অতঃপর তিনি ফজরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদের পাশে রক্ষিত তাঁর বাহনের উপর আরোহণ করে বনভূমিতে প্রত্যাবর্তন করতেন।’ [সহিহ মুসলিম]

■ তবে বিখ্যাত ইমামদের অনেকেই হাদিসের বিভিন্নতার কারণে সবগুলো হাদিসের মধ্যে সমন্বয় করে বলেছেন, মূলত কদরের রাত শেষ দশকে হয়, তবে তা প্রতি বছর নির্দিষ্ট দিনে হয় না, বরং এতে স্থানান্তর ঘটে। ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক, ইমাম সাওরি, ইমাম আবু সাওর, ইমাম মাযিনি, ইমাম ইবনু হাজার হায়সামি (রাহিমাহুমুল্লাহ্) এই মত দিয়েছেন। তাঁরা সবাই ছিলেন বড় বড় ইমাম ও মুহাদ্দিস।

■ সর্বশেষ লেখক ইবনু হাজার (রাহ.) সকল মত উল্লেখ করে, তিনিও এই মত দিয়েছেন যে, এটি নির্দিষ্ট তারিখেই প্রতি বছর হয় না। এর স্থানান্তর ঘটে। তবে, এটি রামাদানের শেষ দশকেই আছে। [ফাতহুল বারি: ৪/৩০৯]

■ আমরা বলবো, সর্বশেষ মতটিই নিরাপদ। অর্থাৎ, এই রাতটি শেষ দশকে রয়েছে, তবে তা স্থানান্তরিত হয়। আমরা আরেকটু অগ্রগামী হয়ে এটুকু বলতে পারি যে, এটি শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হাদিসে এসেছে, ‘‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’’ [সহিহ বুখারি: ২০১৭]

জোড় রাতে তালাশ করতে নিষেধ করা হয়নি। বরং হাদিসে শেষ দশ রাতেই তালাশ করতে বলা হয়েছে। তবে, এই হাদিসে বেজোড় রাতের ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

 

লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল, যেগুলো তুলনামূলক অনেক সহজ “

প্রথমেই জেনে খুশি হোন: আল্লাহ বলেছেন, কদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এই রাতে একটি নেক আমল করা মানে হাজার মাস যাবত এই নেক আমলটি করা। সুবহানাল্লাহ্! রামাদানের শেষ দশ দিনে কদর তালাশ করতে বলেছেন নবিজি। তাই, আমরা শেষ দশ দিন নিচের এই আমলগুলো করতে পারি।

(এক.) তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় পড়া (বিশেষত শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আর রাতের প্রথম প্রহরে নিচের বাকি আমলগুলো করা যায়)

লাইলাতুল কদরের প্রধান আমল হলো, কিয়াম তথা নামাজে দণ্ডায়মান হওয়া। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদতের জন্য) দণ্ডায়মান হবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০১; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬০]

সম্ভব হলে ৮/১০ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায়। এরপর আন্তরিকতার সাথে দু‘আ করা।

(দুই.) সুরা ইখলাস পাঠ করা

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই এই সুরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৩]

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ বার শেষ করবে, তার জন্য জান্নাতে আল্লাহ্ একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’’ [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৯; হাদিসটি সহিহ]

তাই, আমরা শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ২০/৩০ বার সুরা ইখলাস পড়তে পারি।

এছাড়া সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, সুরা মুলক ও বাকি তিন কুল পড়তে পারি।

(তিন.) সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া।

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
◉ যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, সে ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
◉ যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, সে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সওয়াব পাবে;
◉ যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, সে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সওয়াব পাবে;
◉ যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ২/১২৫২; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/৩৪৪; হাদিসটি হাসান]

(চার.) একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—

لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর]

অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

◉ সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
◉ তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
◉ তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
◉ ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
◉ ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৩২৯৩; আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৭৭]

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি দশবার করে বলবে, সে ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকি পাবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৪০৪]

(পাঁচ.) কদরের রাতের বিশেষ দু‘আটি মনোযোগের সাথে পড়া।

আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—

اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ

[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’অ্ফু ‘আন্নী]

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/১৮২; হাদিসটি সহিহ]

এই দু‘আটি শেষ দশকের রাতগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পড়তে চেষ্টা করবো।

(ছয়.) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্তিগফার ও তাওবার যিকরটি বেশ কয়েকবার পড়া।

ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’

ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

[আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযি (অথবা আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি) লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি]

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫১৭; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি সহিহ]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল ‘আযীম, আল্লাযি লা ইইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি হাসান]

 

(সাত.) বেশি বেশি সাইয়িদুল ইসতিগফার পড়া। সাইয়িদুল ইস্তিগফার অর্থ ‘ইস্তিগফারের নেতা’।

ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟﺎَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟﺎَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟﺎَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟﺎَّ ﺃَﻧْﺖَ

[আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা]

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমারই গোলাম। তুমি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছো, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৬]

(আট.) নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং যেকোনো জীবিত ও মৃত মুসলিমের জন্য দু‘আ করা।

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।

رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]

(নয়.) গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপক অর্থবোধক একটি দু‘আ বেশি করে পড়া।

​​​​​​​اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

[আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ।]

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ১২০০; হাদিসটি সহিহ]

(দশ.) দ্বীনের উপর টিকে থাকার দু‘আ, এটিও বেশি করে পড়া উচিত এই রাতে।

উম্মু সালামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু‘আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন, তা হলো–

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ

[ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দীনিকা]

অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন।
[তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫২২; হাদিসটি হাসান]

 

(এগারো.) কিছু দান-সদাকাহ্ করা।

যদি সম্ভব হয়, তবে রাতেই করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস (৮৪ বছর) ধরে এক টাকা দান করার নেকি পাবেন। এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ [সুরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩]

যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদেরকে দিয়ে দিন।

(বারো.) বেশি করে দরুদ পড়বেন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। শ্রেষ্ঠ দরুদ সেটিই, যা আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি।

বেশি বেশি আমল করতে গিয়ে কোয়ালিটির দিকে উদাসীন হবেন না। আল্লাহর কাছে আন্তরিকতাপূর্ণ আমলের মূল্য অনেক বেশি।

এগুলোর বাইরে কুরআন তিলাওয়াত, মাসনুন যিকর, অনির্ধারিত বিভিন্ন যিকর, তাসবিহাত, দু‘আ ইত্যাদি তো আছেই। মোট কথা ইবাদতে লেগে থাকা।

লাইলাতুল কদরের জন্য নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ বা ইবাদতের কথা সহিহ বর্ণনা থেকে জানা যায় না। কেবল আয়িশা (রা.)-কে শেখানো দু‘আটি ব্যতীত, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, সব ধরনের নেক আমলই সাধ্যানুযায়ী কদরের রাতে করা উচিত।

আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

——————-

রমাদান সম্পর্কে আরো পড়তে এখেন ক্লিক করুন রমাদান
FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST