হযরত লূত (আঃ) ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভাতিজা। চাচার সাথে তিনিও জন্মভূমি ‘বাবেল’ শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেনআনে চলে আসেন। আল্লাহ লূত (আঃ)-কে নবুঅত দান করেন এবং কেনআন থেকে অল্প দূরে জর্ডান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। এ এলাকায় সাদূম, আমূরা, দূমা, ছা‘বাহ ও ছা‘ওয়াহ নামে বড় বড় পাঁচটি শহর ছিল।

কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে এদের সমষ্টিকে ‘মু’তাফেকাহ’ (নাজম ৫৩/৫৩) বা ‘মু’তাফেকাত’ (তওবাহ ৯/৭০, হাক্বক্বাহ ৬৯/৯) শব্দে বর্ণনা করেছে। যার অর্থ ‘জনপদ উল্টানো শহরগুলি’। এ পাঁচটি শহরের মধ্যে সাদূম (سدوم) ছিল সবচেয়ে বড় এবং সাদূমকেই রাজধানী মনে করা হ’ত। হযরত লূত (আঃ) এখানেই অবস্থান করতেন।

এখানকার ভূমি ছিল উর্বর ও শস্য-শ্যামল। এখানে সর্বপ্রকার শস্য ও ফলের প্রাচুর্য ছিল। এসব ঐতিহাসিক তথ্য বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। ‘সাদূম’ সম্পর্কে সকলে একমত। বাকী শহরগুলির নাম কি, সেগুলির সংখ্যা তিনটি, চারটি না ছয়টি, সেগুলিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা কয়শত, কয় হাজার বা কয় লাখ ছিল, সেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এগুলি ইস্রাঈলী বর্ণনা, যা কেবল ইতিহাসের বস্ত্ত হিসাবে গ্রহণ করা যায়। কুরআন ও হাদীছে শুধু মূল বিষয়বস্ত্তর বর্ণনা এসেছে, যা মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়। উল্লেখ্য যে, লূত (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১৫টি সূরায় ৮৭টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

লূত (আঃ)-এর কওম আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছিল। দুনিয়াবী উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হওয়ার কারণে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী জাতিতে পরিণত হয়েছিল। পূর্বেকার ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলির ন্যায় তারা চূড়ান্ত বিলাস-ব্যসনে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল। অন্যায়-অনাচার ও নানাবিধ দুষ্কর্ম তাদের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি পুংমৈথুন বা সমকামিতার মত নোংরামিতে তারা লিপ্ত হয়েছিল, যা ইতিপূর্বেকার কোন জাতির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়নি।

জন্তু-জানোয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট ও হঠকারী এই কওমের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ লূত (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন। কুরআনে লূতকে ‘তাদের ভাই বলা হলেও তিনি ছিলেন সেখানে মুহাজির। নবী ও উম্মতের সম্পর্কের কারণে তাঁকে ‘তাদের ভাই বলা হয়েছে। তিনি এসে পূর্বেকার নবীগণের ন্যায় প্রথমে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে বললেন,

আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি এর জন্য তোমাদের নিকটে কোনরূপ প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্বপ্রভু আল্লাহ দিবেন (শোআরা ২৬/১৬২-১৬৫)।

অতঃপর তিনি তাদের বদভ্যাসের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ‘বিশ্ববাসীর মধ্যে কেন তোমরাই কেবল পুরুষদের নিকটে (কুকর্মের উদ্দেশ্যে- আ‘রাফ ৭/৮১) এসে থাক ? ‘আর তোমাদের স্ত্রীগণকে বর্জন কর, যাদেরকে তোমাদের জন্য তোমাদের পালনকর্তা সৃষ্টি করেছেন? নিঃসন্দেহে তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়’ (শো‘আরা ২৬/১৬৫-১৬৬)।

জবাবে কওমের নেতারা বলল, হে লূত! যদি তুমি (এসব কথাবার্তা থেকে) বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই বহিষ্কৃত হবে। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের এইসব কাজকে ঘৃণা করি (শোআরা ২৬/১৬৭-১৬৮)।

তিনি তাদের তিনটি প্রধান নোংরামির কথা উল্লেখ করে বলেন,
তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ কখনো করেনি। ‘তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে গর্হিত কর্ম করছ? জবাবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল যে, আমাদের উপরে আল্লাহর গযব নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও। তিনি তখন বললেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! এই দুষ্কৃতিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তুমি আমাকে সাহায্য কর (আনকাবূত ২৯/২৮-৩০; আরাফ ৭/৮০)।

নিজ কওমের প্রতি হযরত লূত (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি মর্মান্তিক রূপে প্রতিভাত হয়। তারা এতই হঠকারী ও নিজেদের পাপকর্মে অন্ধ ও নির্লজ্জ ছিল যে, তাদের কেবল একটাই জবাব ছিল, তুমি যে গযবের ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে আস দেখি? কিন্তু কোন নবীই স্বীয় কওমের ধ্বংস চান না। তাই তিনি ছবর করেন ও তাদেরকে বারবার উপদেশ দিতে থাকেন।

তখন তারা অধৈর্য হয়ে বলে যে, ‘এদেরকে তোমাদের শহর থেকে বের করে দাও। এই লোকগুলি সর্বদা পবিত্র থাকতে চায় (আরাফ ৭/৮২; নমল ২৭/৫৬)।

তারা আল্লাহভীতি থেকে বেপরওয়া হয়ে অসংখ্য পাপকর্মে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। কুরআন তাদের তিনটি প্রধান পাপ কর্মের উল্লেখ করেছে।
(১) পুংমৈথুন
(২) রাহাজানি এবং
(৩) প্রকাশ্য মজলিসে কুকর্ম করা (আনকাবূত ২৯/২৯)।

বলা বাহুল্য, সাদূমবাসীদের পূর্বে পৃথিবীতে সমকামিতার মত এরূপ কুকর্ম কেউ করেছে বলে শোনা যায়নি। এমনকি অতি বড় মন্দ ও নোংরা লোকদের মধ্যেও কখনো এরূপ নিকৃষ্টতম চিন্তার উদ্রেক হয়নি। উমাইয়া খলীফা অলীদ ইবনে আবদুল মালেক (৮৬-৯৭/৭০৫-৭১৬ খৃঃ) বলেন, কুরআনে লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা উল্লেখ না থাকলে আমি কল্পনাও করতে পারতাম না যে, কোন মানুষ এরূপ নোংরা কাজ করতে পারে । তাদের এই দুষ্কর্মের বিষয়টি দুটি কারণে ছিল তুলনাহীন।
এক- এ কুকর্মের কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল না এবং একাজ সম্পূর্ণ নতুনভাবে তারা চালু করেছিল। দুই- এ কুকর্ম তারা প্রকাশ্য মজলিসে করত, যা ছিল বেহায়াপনার চূড়ান্ত রূপ।

আল্লাহ বলেন- ববস্ত্ততঃ মানুষ যখন দেখে যে, সে কারু মুখাপেক্ষী নয়, তখন সে বেপরওয়া হয় (আলাক্ব ৯৬/৬-৭)।

সাদূমবাসীদের জন্য আল্লাহ স্বীয় নেয়ামত সমূহের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তার শুকরিয়া আদায় না করে কুফরী করে এবং ধনৈশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়ে বিলাস-ব্যসন, কাম-প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার জালে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে পড়ে যে, লজ্জা-শরম ও ভাল-মন্দের স্বভাবজাত পার্থক্যবোধটুকুও তারা হারিয়ে ফেলে। তারা এমন প্রকৃতি বিরুদ্ধ নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়, যা হারাম ও কবীরা গোনাহ তো বটেই, কুকুর-শূকরের মত নিকৃষ্ট জন্তু-জানোয়ারও এর নিকটবর্তী হয় না। তারা এমন বদ্ধ নেশায় মত্ত হয় যে, লূত (আঃ)-এর উপদেশবাণী ও আল্লাহর গযবের ভীতি প্রদর্শন তাদের হৃদয়ে কোন রেখাপাত করেনি। উল্টা তারা তাদের নবীকেই শহর থেকে বের করে দেবার হুমকি দেয় এবং বলে যে,‘তোমার প্রতিশ্রুত আযাব এনে দেখাও, যদি তুমি সত্যবাদী হও (আনকাবূত ২৯/২৯)।

তখন লূত (আঃ) বিফল মনোরথ হয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করলেন। ফলে যথারীতি গযব নেমে এল। উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশ্বে মহামারী আকারে যে মরণ ব্যাধি এইড্সের বিস্তৃতি ঘটেছে, তার মূল কারণ হল পুংমৈথুন, পায়ু মৈথুন ও সমকামিতা। ইসলামী শরীআতে এই কুকর্মের একমাত্র শাস্তি হল উভয়ের মৃত্যুদন্ড (যদি উভয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে একাজ করে)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি, যে লূতের কওমের মত কুকর্ম করে। অন্যত্র তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি ফিরে তাকাবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর মলদ্বারে মৈথুন করে । তিনি বলেন, আমি আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে (ক্ষতিকর হিসাবে) ভয় পাই লূত জাতির কুকর্মের।

আল্লাহর হুকুমে কয়েকজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে প্রথমে হযরত ইবরাহীমের বাড়ীতে পদার্পণ করলেন। তিনি তাদেরকে মেহমানদারীর জন্য একটা আস্ত বাছুর গরু যবেহ করে ভুনা করে তাদের সামনে পরিবেশন করলেন। কিন্তু তারা তাতে হাত দিলেন না। এতে ইবরাহীম (আঃ) ভয় পেয়ে গেলেন (হূদ ১১/৬৯-৭০)। কেননা এটা ঐ সময়কার দস্যু-ডাকাতদেরই স্বভাব ছিল যে, তারা যে বাড়ীতে ডাকাতি করত বা যাকে খুন করতে চাইত, তার বাড়ীতে খেত না।

ফেরেশতাগণ নবীকে অভয় দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আমরা এসেছি অমুক শহরগুলি ধ্বংস করে দিতে। ইবরাহীম একথা শুনে তাদের সাথে ‘তর্ক জুড়ে দিলেন (হূদ ১১/৭৪) এবং বললেন, ‘সেখানে যে লূত আছে। তারা বললেন, সেখানে কারা আছে, আমরা তা ভালভাবেই জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করব, তবে তাঁর স্ত্রী ব্যতীত। সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (আনকাবূত ২৯/৩১-৩২)। অতঃপর তারা ইবরাহীম দম্পতিকে ইসহাক-এর জন্মের সুসংবাদ শুনালেন।

বিবি সারা ছিলেন নিঃসন্তান। অতি বৃদ্ধ বয়সে এই সময় তাঁকে হযরত ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় ইসহাকের পরে তার ঔরসে যে ইয়াকূবের জন্ম হবে সেটাও জানিয়ে দেওয়া হল (হূদ ১১/৭১-৭২)। উল্লেখ্য যে, ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল এবং তাঁর বংশধরগণকে বনু ইস্রাঈল বলা হয়। যে বংশে হাযার হাযার নবীর আগমন ঘটে।

কেনআনে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় হয়ে ফেরেশতাগণ সাদূম নগরীতে ‘লূত (আঃ)-এর গৃহে উপস্থিত হলেন (হিজর ১৫/৬১)। এ সময় তাঁরা অনিন্দ্য সুন্দর নওজোয়ান রূপে আবির্ভূত হন। কেননা আল্লাহ তাআলা যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করেন, তখন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের পরীক্ষা নেন। সাদূম জাতি তাদের এই চূড়ান্ত পরীক্ষায় ব্যর্থকাম হল। তারা যখন জানতে পারল যে, লূত-এর বাড়ীতে অতীব সুদর্শন কয়েকজন নওজোয়ান এসেছে, ‘তখন তারা খুশীতে আত্মহারা হয়ে সেদিকে ছুটে এল (হূদ ১১/৭৮)।

এ দৃশ্য দেখে লূত (আঃ) তাদেরকে অনুরোধ করে বললেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। অতিথিদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে লজ্জিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভাল মানুষ নেই? (হূদ ১১/৭৮)। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনলো না। তারা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকার উপক্রম করল। লূত (আঃ) বললেন, হায়! ‘আজকে আমার জন্য বড়ই সংকটময় দিন (হূদ ১১/৭৭)। তিনি বললেন, ‘হায়! যদি তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন শক্তি থাকত, অথবা আমি কোন সুদৃঢ় আশ্রয় পেতাম (হূদ ১১/৮০)। এবার ফেরেশতাগণ আত্মপরিচয় দিলেন এবং লূতকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘হে লূত! আমরা আপনার প্রভুর প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনোই আপনার নিকটে পৌঁছতে পারবে না (হূদ ১১/৮১)।

এজন্যেই আমাদের রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ রহম করুন লূতের উপরে, তিনি সুদৃঢ় আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন (অর্থাৎ আল্লাহর আশ্রয়)। অতঃপর জিবরীল তাদের দিকে পাখার ঝাপটা মারতেই বীর পুঙ্গরেরা সব অন্ধ হয়ে ভেগে গেল।

আল্লাহ বলেন, ‘ওরা লূতের কাছে তার মেহমানদের দাবী করেছিল। তখন আমি তাদের দৃষ্টি বিলুপ্ত করে দিলাম। অতএব আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও হুঁশিয়ারী (ক্বামার ৫৪/৩৭)।

অতঃপর ফেরেশতাগণ হযরত লূত (আঃ)-কে স্বীয় পরিবারবর্গসহ (ক্বামার ৫৪/৩৪) ‘কিছু রাত থাকতেই এলাকা ত্যাগ করতে বললেন এবং বলে দিলেন যেন ‘কেউ পিছন ফিরে না দেখে। তবে আপনার বৃদ্ধা স্ত্রী ব্যতীত। নিশ্চয়ই তার উপর ঐ গযব আপতিত হবে, যা ওদের উপরে হবে। ভোর পর্যন্তই ওদের মেয়াদ। ভোর কি খুব নিকটে নয়? (হূদ ১১/৮১; শোআরা ২৬/১৭১)।

লূত (আঃ)-এর স্ত্রী ঈমান আনেননি এবং হয়তবা স্বামীর সঙ্গে রওয়ানাই হননি। তারা আরও বললেন, ‘আপনি তাদের পিছে অনুসরণ করুন। আর কেউ যেন পিছন ফিরে না তাকায়। আপনারা আপনাদের নির্দেশিত স্থানে চলে যান (হিজর ১৫/৬৫)। এখানে আল্লাহ লূতকে হিজরতকারী দলের পিছনে থাকতে বলা হয়েছে। বস্ত্ততঃ এটাই হল নেতার কর্তব্য।

অতঃপর আল্লাহর হুকুমে অতি প্রত্যুষে গযব কার্যকর হয়। লূত ও তাঁর সাথীগণ যখন নিরাপদ দূরত্বে পৌছেন, তখন জিবরীল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া মাত্র ছুবহে ছাদিক-এর সময় একটি প্রচন্ড নিনাদের মাধ্যমে তাদের শহরগুলিকে উপরে উঠিয়ে উপুড় করে ফেলে দিলেন এবং সাথে সাথে প্রবল বেগে ঘুর্ণিবায়ুর সাথে প্রস্তর বর্ষণ শুরু হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,

অবশেষে যখন আমাদের হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমরা উক্ত জনপদের উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপরে ক্রমাগত ধারায় মেটেল প্রস্তর বর্ষণ করলাম। ‘যার প্রতিটি তোমার প্রভুর নিকটে চিহ্নিত ছিল। আর ঐ ধ্বংসস্থলটি (বর্তমান আরবীয়) যালেমদের থেকে বেশী দূরে নয়’ (হূদ ১১/৮২-৮৩)।

এটা ছিল তাদের কুকর্মের সাথে সামঞ্জস্যশীল শাস্তি। কেননা তারা যেমন আল্লাহর আইন ও প্রাকৃতিক বিধানকে উল্টিয়েছিল অর্থাৎ স্ত্রীসঙ্গ বাদ দিয়ে মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে পুংমৈথুনে ও সমকামিতায় লিপ্ত হয়েছিল, ঠিক তেমনি তাদেরকে মাটি উল্টিয়ে উপুড় করে শাস্তি দেওয়া হ’ল।

ডঃ জামু বলেন, তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন আকারের এক হাযার উল্কাপিন্ড সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ওযন ছিল ৩৬ টন। এর মধ্যে অনেকগুলি আছে নুড়ি পাথর, যাতে গ্রানাইট ও কাঁচা অক্সাইড লৌহ মিশ্রিত। তাতে লাল বর্ণের চিহ্ন অংকিত ছিল এবং ছিল তীব্র মর্মভেদী। বিস্তর গবেষণার পরে স্থির হয় যে, এগুলি সেই প্রস্তর, যা লূত জাতির উপরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল (সংক্ষেপায়িত)। ইতিহাস-বিজ্ঞান বলে, সাদূম ও আমুরার উপরে গন্ধক (Sulpher)-এর আগুন বর্ষিত হয়েছিল।

হযরত লূত (আঃ)-এর নাফরমান কওমের শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করার পর দুনিয়ার অপরাপর জাতিকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘(জনপদ উল্টানো ও প্রস্তর বর্ষণে নিশ্চিহ্ন ঐ ধ্বংসস্থলটি) বর্তমান কালের যালেমদের থেকে খুব বেশী দূরে নয় (হূদ ১১/৮৩)। মক্কার কাফেরদের জন্য উক্ত ঘটনাস্থল ও ঘটনার সময়কাল খুব বেশী দূরের ছিল না। মক্কা থেকে ব্যবসায়িক সফরে সিরিয়া যাতায়াতের পথে সর্বদা সেগুলো তাদের চোখে পড়ত। কিন্তু তা থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতো না। বরং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে অবিশ্বাস করত ও তাঁকে অমানুষিক কষ্ট দিত। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

যখন আমার উম্মত পাঁচটি বিষয়কে হালাল করে নেবে, তখন তাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে।
(১) যখন পরস্পরে অভিসম্পাৎ ব্যাপক হবে
(২) যখন তারা মদ্যপান করবে
(৩) রেশমের কাপড় পরিধান করবে
(৪) গায়িকা-নর্তকী গ্রহণ করবে
(৫) পুরুষ-পুরুষে ও নারী-নারীতে সমকামিতা করবে।

কওমে লূত-এর বর্ণিত ধ্বংসস্থলটি বর্তমানে ‘বাহরে মাইয়েত বা ‘বাহরে লূত অর্থাৎ ‘মৃত সাগর বা ‘লূত সাগর নামে খ্যাত। যা ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বিশাল অঞ্চল জুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে। যেটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বেশ নীচু। এর পানিতে তৈলজাতীয় পদার্থ বেশী। এতে কোন মাছ, ব্যাঙ এমনকি কোন জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘মৃত সাগর বা ‘মরু সাগর বলা হয়েছে। সাদূম উপসাগর বেষ্টক এলাকায় এক প্রকার অপরিচিত বৃক্ষ ও উদ্ভিদের বীজ পাওয়া যায়, সেগুলো মাটির স্তরে স্তরে সমাধিস্থ হয়ে আছে। সেখানে শ্যামল-তাজা উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার ফল কাটলে তার মধ্যে পাওয়া যায় ধূলি-বালি ও ছাই। এখানকার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে গন্ধক পাওয়া যায়। Natron ও পেট্রোল তো আছেই। এই গন্ধক উল্কা পতনের অকাট্য প্রমাণ। আজকাল সেখানে সরকারী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ হ’তে পর্যটকদের জন্য আশপাশে কিছু হোটেল-রেস্তোঁরা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনা থেকে শিক্ষা হাছিলের জন্য কুরআনী তথ্যাদি উপস্থাপন করে বিভিন্ন ভাষায় উক্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে তা থেকে উপদেশ গ্রহণের জন্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই হত সবচাইতে জরূরী বিষয়। আজকের এইড্স আক্রান্ত বিশ্বের নাফরমান রাষ্ট্রনেতা, সমাজপতি ও বিলাসী ধনিক শ্রেণী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম হত। কেননা এগুলি মূলতঃ মানুষের জন্য শিক্ষাস্থল হিসাবে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন সমূহ রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য’ … এবং বিশ্বাসীদের জন্য (হিজর ১৫/৭৫, ৭৭)। একই ঘটনা বর্ণনা শেষে অন্যত্র তিনি বলেন, ‘জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমরা অত্র ঘটনার মধ্যে স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি (আনকাবূত ২৯/৩৫)।

তখন উক্ত জনপদে লূত-এর পরিবারটি ব্যতীত মুসলমান ছিল না। আল্লাহ বলেন, فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ- ‘আমরা সেখানে একটি বাড়ী ব্যতীত কোন মুসলমান পাইনি (যারিয়াত ৫১/৩৬)। কুরআনী বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত গযব হতে মাত্র লূত-এর পরিবারটি নাজাত পেয়েছিল। তাঁর স্ত্রী ব্যতীত (আরাফ ৭/৮৩)।

তাফসীরবিদগণ বলেন, লূত-এর পরিবারের মধ্যে কেবল তাঁর দুমেয়ে মুসলমান হয়েছিল। তবে লূত-এর কওমের নেতারা লূত-কে সমাজ থেকে বের করে দেবার যে হুমকি দেয়, সেখানে তারা বহুবচন ব্যবহার করে বলেছিল أَخْرِجُوْهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُونَ. ‘এদেরকে তোমাদের শহর থেকে বের করে দাও। কেননা এই লোকগুলি সর্বদা পবিত্র থাকতে চায় (আরাফ ৭/৮২; নমল ২৭/৫৬)। এতদ্ব্যতীত শহর থেকে বের হবার সময় আল্লাহ লূতকে ‘সবার পিছনে থাকতে বলেন (হিজর ১৫/৬৫)।

অন্যত্র বলা হয়েছে فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ ‘অতঃপর আমরা তাকে ও তার পরিবার সবাইকে নাজাত দিলাম (শোআরা ২৬/১৭০)।এখানে أجمعين বা ‘সবাইকে শব্দের মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ঈমানদারগণের সংখ্যা বেশ কিছু ছিল। অতএব এখানে লূত-এর ‘আহ্ল (আরাফ ৮৩; হূদ ৮১; নমল ৫৭; ক্বামার ৩৪) বা পরিবার বলতে লূত-এর দাওয়াত কবুলকারী ঈমানদারগণকে সম্মিলিতভাবে ‘আহলে ঈমান বা ‘একটি ঈমানদার পরিবার গণ্য করা যেতে পারে।

তবে প্রকৃত ঘটনা যেটাই হৌক না কেন, কেবলমাত্র নবীর অবাধ্যতা করলেই আল্লাহর গযব আসাটা অবশ্যম্ভাবী। তার উপরে কেউ ঈমান আনুক বা না আনুক। হাদীছে এসেছে, ‘ক্বিয়ামতের দিন অনেক নবীর একজন উম্মতও থাকবে না। এখানে লক্ষণীয় যে, নবীপত্নী হয়েও লূতের স্ত্রী গযব থেকে রেহাই পাননি। আল্লাহ নূহ পত্নী ও লূত পত্নীকে ক্বিয়ামতের দিন বলবেন- ‘যাও জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও (তাহরীম ৬৬/১০)।

বর্তমানে যে এলাকাটিকে ট্রান্স জর্ডান বলা হয় সেখানেই ছিল লূত আঃ এর অভিশপ্ত জাতি বসবাস। বাইবেলে সাদূম কে এ জাতির কেন্দ্রস্থল বলা হয়েছে। মৃত সাগরের (Dead sea) নিকটবর্তী কোথাও এর অবস্থান ছিল। তালমূদে বলা হয়েছে, সাদূম ছাড়া তাদের আরো চারটি বড় বড় শহর ছিল। এ শহরগুলোর মধ্যবর্তী এলাকাসমূহ এমনই শ্যামল সবুজে পরিপূর্ণ ছিল যে, মাইলের পর মাইল জুড়ে এ বিস্তৃত এলাকা যেন একটি বাগান মনে হতো। এ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করতো। কিন্তু আজ এ জাতির নাম- নিশানা দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি তাদের জনপদগুলো কোথায় কোথায় অবস্থিত ছিল তাও আজ সঠিকভাবে জানা যায় না।

আল্লামা কাযঈনী রহঃ তার ইতিহাসগ্রন্থ” আসারুল বিলাদ ও আখইয়ারুল ইবাদ”এ সাদুম অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনার সময় উল্লেখ করেন, “প্রাচীন সেই জনপদে আজকাল কেবল কুচকুচে কালো বর্ণের পাথরই চোখে পড়ে।”

মৃত সাগরই তাদের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। বর্তমানে এটি ‘লূত সাগর’ নামেও পরিচিত। dead sea টি ৫০মাইল দৈর্ঘ্য ও ১১মাইল প্রস্থ। এর সবচেয়ে বেশি গভীরতম অংশ হল ১৩০০ফুট। ১৯৬৭ সালে উত্তর পাশের অর্ধেক অংশ সম্পূর্ণ জর্দানের অধীন ছিল। আর দক্ষিণভাগের অর্ধেক অংশ পরিপূর্ণভাবে জর্দান ও ইসরাইলের অধীনে ছিল। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইলী বাহিনী গোটা পশ্চিম উপকূল গ্রাস করে নেয়। এই সাগরের সাথে অন্য কোন সমুদ্রের সম্পর্ক নেই ও অন্যান্য সমুদ্রের তূলনায় এটাকে একটা ঝিলের মতই মনে হবে। তবে এর পানি নিরেট সমুদ্রের পানি এবং এর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ২৩-২৫% যেখানে সাধারণ সমুদ্রগুলোতে লবণাক্ততার পরিমানক থাকে ৪-৬%।এই সমুদ্রে কোন মানুষ ডুবে না বরং সাতার না পারলেও ভেসে থাকে। জর্ডান নদীসহ আশেপাশের পাহাড়ি নদীগুলোর পানি এই সাগরে এসে মিলিত হয়। কিন্তু কখনও যদি পার্শ্ববর্তী নদীগুলো থেকে মাছ এসে পড়ে তবে আল্লাহ্‌র গজব রুপে তীব্র লবণাক্ততার কারণে সাথে সাথে তা মারা যায়। এর উপর দিয়ে কোন পাখিও উড়তে দেখা যায় না। গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে,এটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা যা এর নিকটবর্তী ভুমধ্যসাগরে তথা রোম সাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৩০০ফুট নিচে।

কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেছেন-, “আমি সেই জমিনের উঁচু এলাকাকে নিচু এলাকা বানিয়ে দিয়েছি”
কুরআন কারীমে লূত আঃ এর কওমের বসতিগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “আর নিঃসন্দেহে সেই বসতিগুলো সোজা পথ (তাফসীরে শাম দেশে যাওয়ার পথে) পড়ে।”

মিশরের গবেষক আব্দুল ওয়াহহাব নাজ্জার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, “হযরত লূত আঃ এর জাতির উপর যে গজব নেমে এসেছিল সেই আজাব থেকেই এই মৃত সাগরের সৃষ্টি”।
লবণাক্ততা ও রাসায়নিক উপদানের পরিমাণ এত বেশি যে লোকজন এখানে নিজেদের শরীরের চামড়ার ময়লা পরিষ্কার করতে গোসল করতে নামে। বর্তমানে এটা একটা অশ্লীল পর্যটন কেন্দ্র হয়ে গড়ে ওঠেছে যা মানুষকে পূর্বাক্ত আযাবের কথা ভুলিয়ে দিচ্ছে বলা চলে, মানুষ যাচ্ছে আনন্দ উপভোগ করতে।

লূত (আঃ) এর পাপী সম্প্রদায়ই প্রথম সমকামিতা (অর্থাৎ পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলা যৌন আচরণ করা) শুরু করে। লূত (আঃ) যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন তারা লূত(আঃ) কে নির্বাসন দিতে চায় এবং উপহাস করে বলে -“এরা নিজেদের বেশি পবিত্র রাখতে চায়।”

তাফসিরে পাওয়া যায়, হযরত জিব্রাইল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ) ও মিকাইল (আঃ) সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হযরত লূত (আঃ) এর এলাকায় উপস্থিত হন এবং মেহামান হন। লূত(আঃ) গোপনে তাদেরকে আশ্রয় দেন, কিন্তু লূত (আঃ) এর স্ত্রী এই খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।

পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লূত (আঃ) এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লূত (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য।মুফাসসিরগণ বলেন- এরপর জিব্রাইল (আঃ) তাদের সামনে আসেন এবং আসল রুপ ধারণ করে তাঁর ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সকল পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়।এরপর জিব্রাইল (আঃ) লূত(আঃ) এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

এরপর ডানা দিয়ে সমগ্র সাদ্দূম নগরীকেই গোড়া সহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দূম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিলো।এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন।

“অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে আসলো, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।” [সূরা হুদ(১১): ৮২]

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
“আর লূতকে আমি পয়গম্বর করে পাঠাই৷ তারপর স্মরণ করো, যখন সে নিজের সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বললোঃ “তোমরা কি এতই নির্লজ্জ হয়ে গেলে যে, দুনিয়ার ইতিপূর্বে কেউ কখনো করেনি এমন অশ্লীল কাজ করে চলেছো? তোমরা মেয়েদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছো? প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী গোষ্ঠী৷” কিন্তু তার সম্প্রদায়ের জওয়াব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, “এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও৷ এরা বড়ই পবিত্রার ধ্বজাধারী হয়েছে৷” শেষ পর্যন্ত আমি লুতের স্ত্রীকে ছাড়া -যে পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তরভুক্ত ছিল তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি এবং এ সম্প্রদায়ের ওপর (পাথর) বৃষ্টি বর্ষণ করি৷ তারপর সেই অপরাধীদের কী পরিণাম হয়েছিল দেখো! (সূরা আরাফঃ ৮০-৮৪)

অন্যান্য স্থানে এ জাতির আরো কয়েকটি নৈতিক অপরাধের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধটির উল্লেখ করেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ অপরাধটির ফলে তাদের ওপর আল্লাহর আযাব আপতিত হয়।

এ ঘৃণ্য অপকর্মটির বদৌলতে এ জাতি যদিও দুনিয়ার বুকে চিরদিনই ধিক্কার ও কুখ্যাতি কুড়িয়েছে। কিন্তু অসৎ ও দুষ্কর্মশীল লোকেরা এ অপকর্মটি থেকে কখনো বিরত থাকেনি। তবে একমাত্র গ্রীকরাই এ একক কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে যে, তাদের দার্শনিকরা এ জঘন্য অপরাধটিকে উৎকৃষ্ট নৈতিক গুণের পর্যায়ে পৌছে দেবার চেষ্টা করেছে। এরপর আর যেটুকু বাকি ছিল, আধুনিক ইউরোপ তা পূর্ণ করে দিয়েছে। ইউরোপে এর স্বপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এমনকি জার্মানীর পার্লামেণ্ট একে সর্বপ্রথম রীতিমতো বৈধ গণ্য করেছে। অথচ সমকামিতা যে সম্পূর্ণ প্রকৃতি বিরোধী একথা একটি অকাট্য সত্য।

মহান আল্লাহ শুধুমাত্র মানবজাতির জৈবিক চাহিদা,মনোরঞ্জণ,সন্তান উৎপাদন ও বংশরক্ষার উদ্দেশ্যই সকল প্রানীর মধ্যে নর-নারীর পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর মানব জাতির মধ্যে এ বিভিন্নতার আর একটি বাড়তি উদ্দেশ্য হচ্ছে নর ও নারী মিলে এক একটি পরিবারের জন্ম দেবে এবং তার মাধ্যমে সমাজ-সভ্যতা -সংস্কৃতির ভিত গড়ে উঠবে। এ উদ্দেশ্যেই নারী ও পুরুষের দুটি পৃথক লিংগের সৃষ্টি করা হয়েছে।তাদের মধ্যে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়েছে। পারষ্পরিক দাম্পত্য উদ্দেশ্য পূর্ণ করার উপযোগী করে তাদের শারীরিক ও মানসিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের পারস্পরিক আকর্ষণ ও মিলনের মধ্যে এমন একটি আনন্দ মধুর স্বাদ রাখা হয়েছে যা প্রকৃতির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্যে একই সংগে আকর্ষনকারী ও আহবায়কের কাজ করে এবং এ সংগে তাদেরকে দান করে এ কাজের প্রতিদানও। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রকৃতির এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধাচারণ করে সমকামিতার মাধ্যেম যৌন আনন্দ লাভ করে সে একই সংগে কয়েকটি অপরাধ করে। প্রথমত সে নিজের এবং নিজের স্বাভাবিক দৈহিক ও মানসিক কাঠামোর সাথে যুদ্ধ করে এবং তার মধ্যে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এর ফলে তাদের উভয়ের দেহ, মন ও নৈতিক বৃত্তির ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। দ্বিতীয়ত, সে প্রকৃতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। কারণ প্রকৃতি তাকে যে আনন্দ স্বাদ মানব জাতির ও মানসিক সংস্কৃতির সেবায় প্রতিদান হিসেবে দিয়েছিল, এবং যা অর্জন করাকে তার দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকারের সাথে শর্তযুক্ত করেছিল, সেই স্বাদ ও আনন্দ সে কোন প্রকার সেবামূলক কার্যক্রম , কর্তব্য পালন, অধিকার আদায় ও দায়িত্ব সম্পাদন ছাড়াই ভোগ করে। তৃতীয়ত সে মানব সমাজের সাথে প্রকাশ্যে বিশ্বাসঘাতকা করে। কারণ সমাজে যে সমস্ত তামাদ্দুনিক প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছে সেগুলোকে সে ব্যবহার করে এবং তার সাহায্যে লাভবান হয়। কিন্তু যখন তার নিজের দেবার পালা আসে তখন অধিকার ,দায়িত্ব ও কর্তব্যের বোঝা বহন করার পরিবর্তে সে নিজের সমগ্র শক্তিকে নিরেট স্বার্থপরতার সাথে এমনভাবে ব্যবহার করে, যা সামাজিক সংস্কৃত ও নৈতিকতার জন্যে কেবলমাত্র অপ্রয়োজনীয় ও অলাভজনকই হয় না বরং নিদারুনভাবে ক্ষতিকরও হয়। সে নিজেকে বংশ ও পরিবারের সেবার অযোগ্য করে তোলে।নিজের সাথে অন্ততপক্ষে একজন পুরুষকে নারী সূলভ আচরনের লিপ্ত করে। আর এই সংগে কমপক্ষে দুটি মেয়ের জন্যে যৌন ভ্রষ্টতা ও নৈতিক অধ:পতনের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়।
এ থেকে জানা যায়,এ লোকগুলো কেবল নির্লজ্জ, দুষ্কৃতিকারী, ও দুশ্চরিত্রই ছিল না বরং তারা নৈতিক অধাপতনের এমন চরমে পৌছে গিয়েছিল যে, নিজেদের মধ্যে কতিপয় সৎব্যক্তির ও সৎকর্মের দিকে আহবানকারী ও অসৎকর্মের সমালোচনাকারীর অস্তিত্ব পর্যন্ত বরদাশত করতে প্রস্তুত ছিল না।তারা অসৎকর্মের মধ্যে এতদূর ডুবে গিয়েছিল যে, সংশোধনের সামান্যতম আওয়াজও ছিল তাদের সহ্যের বাইরে। তাদের জঘন্যতম পরিবেশে পবিত্রতার যে সামান্যতম উপাদান অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল তাকেও তারা উৎখাত করতে চাইছিল। এ ধরনের একটি চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ যে জাতির সমাজ জীবনে পবিত্রতার সামান্যতম উপাদানও অবশিষ্ট থাকে না তাকে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখার কোন কারণই থাকতে পারে না। পচা ফলের ঝুড়িতে যতক্ষণ কয়েকটি ভাল ফল থাকে ততক্ষণ ঝুড়িটি যত্নের সাথে রেখে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ভাল ফলগুলো ঝুড়ি থেকে বের করে নেয়ার পর এই ঝুড়িটি যত্নের সাথে সংরক্ষিত করে রাখার পরিবর্তে পথের ধারে কোন আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপ করারই যোগ্য হয়ে পড়ে।

অন্যান্য স্থানে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, হযরত লূতের এ স্ত্রীটি সম্ভবত এ সম্প্রদায়েই কন্যা ছিল , সে তার নিজের কাফের আত্মীয়গোষ্ঠির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলায় এবং শেষ পর্যন্তও তাদের সংগ ছাড়েনি। তাই আযাব আসার পূর্বে মহান আল্লাহ যখন হযরত লূত ও তাঁর ঈমানদান সাথীদেরকে হিজরত করার নির্দেশ দেন তখন তাঁর ঐ স্ত্রীকে সংগে নিতে নিষেধ করেন।

লূত, সমকামিতা

কামিতা শাস্তি

কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে কেবল এতটুকুন বলা হয়েছে, যে, লূত জাতি একটি অতি জঘন্য ও নোংরা পাপ কাজের অনুশীলন করে যাচ্ছিল । এবং এ ধরনের পাপ কাজের পরিণামে এ জাতির ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা থেকে আমরা একথা জানতে পেরেছি যে, এটি এমন একটি অপরাধ সমাজ অংগনকে যার কুলুষমুক্ত রাখার চেষ্টা করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়ীত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং এ ধরনের অপরাধকারীদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত।এ প্রসংগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার কোনটিতে বলা হয়েছেঃ ও যার সাথে সে অপরাধ করেছে তাদের উভয়কে হত্যা করো আবার কোনটিতে এর ওপর এতটুকু বৃদ্ধি করা হয়েছেঃ বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত। আবার কোথাও এও বলা হয়েছেঃ ওপরের ও নীচের উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করো।

কিন্তু যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে এ ধরনের কোন মামলা আসেনি তাই এর শাস্তি কিভাবে দেয়া হবে, তা অকাট্যভাবে চিহ্নিত হতে পারেনি।সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলীর(রা) মতে অপরাধীকে তরবারীর আঘাতে হত্যা করতে হবে এবং কবরস্থ করার পরিবর্তে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। হযরত আবু বকর(রা) এ মত সমর্থন করেন।হযরত উমর(রা) ও হযরত উসমানের (রা) মতে কোন পতনোন্মুখ ইমারতের নীচে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ইমারতটিকে তার ওপর ধ্বসীয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাসের (রা) ফতোয়া হচ্ছে, মহল্লার সবচেয়ে উঁচু বাড়ির ছাদ থেকে তাকে পা উপরের দিকে এবং মাথা নিচের দিকে করে নিক্ষেপ করতে এবং এই সংগে উপর থেকে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে।

ফকীহদের মধ্যে ইমাম শাফেঈ(র) বলেন, অপরাধী ও যার সাথে অপরাধ করা হয়েছে তারা বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত , তাদের উভয়কে হত্যা করা ওয়াজিব।শাবী যুহরী, মালিক ও আহমদ (রাহেমাহুল্লাহুর)মতে তাদের শাস্তি হচ্ছে রজম অর্থাৎ পাথর মেরে হত্যা করা। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব,আতা, হাসান বসরী, ইবরাহীম নাখঈ, সুফিয়ান সওরী , ও আওযাঈর (রাহেমাহুমুল্লাহুর )মতে যিনার অপরাধে যে শাস্তি দেয়া হয় এ অপরাধের সেই একই শাক্তি দেয়া হবে। অর্থাঃ অবিবাহিতকে একশত বেত্রাঘাত করে দেশ থেকে বহিস্কার করা হবে, এবং বিবাহিতকে রজম করা হবে। ইমাম আবু হানিফার(র) মতে,তার ওপর কোন দণ্ডবিধি নির্ধারিত নেই বরং এ কাজটি এমন যে,ইসলামী শাসক তার বিরুদ্ধে অবস্থা ও প্রয়োজন অনুপাতে যে কোন শিক্ষনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।এর সমর্থনে ইমান শাফেঈর একটি বক্তব্যও পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তির তার নিজের স্ত্রীর সাথেও লূত জাতির কুকর্ম করা চূড়ান্তভাবে হারাম। সহীহ আবু দাউদ হাদিসের বরাত দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তি উদ্বৃত হয়েছেঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পশ্চাদ্দেশে(পায়ুপথে) যৌন কার্য করে সে অভিশপ্ত। ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বানী উদ্বৃত হয়েছেঃ যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর পশ্চাদ্দেশে যৌন সংগমে লিপ্ত হয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না।

ইমাম তিরমিযী তাঁর আর একটি নির্দেশ উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছেঃ “আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা (দুজন) এতে লিপ্ত হবে তাদেরকে শাস্তি দাও৷ তারপর যদি তারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দাও৷ কেননা আল্লাহ বড়ই তাওবা কবুলকারী ও অনুগ্রশীল৷ তবে একথা জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে তাওবা কবুল হবার অধিকার এক মাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞতার কারণে কোন খারাপ কাজ করে বসে এবং তারপর অতি দ্রুত তাওবা করে ৷ এ ধরনের লোকদের প্রতি আল্লাহ আবার তাঁর অনুগ্রহের দৃষ্টি নিবন্ধ করেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ৷ কিন্তু তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা খারাপ কাজ করে যেতেই থাকে, এমন কি তাদের কারো মৃত্যুর সময় এসে গেলে সে বলে, এখন আমি তাওবা করলাম৷ অনুরূপভাবে তাওবা তাদের জন্যও নয় যারা মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কাফের থাকে৷ এমন সব লোকদের জন্য তো আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছে৷” (নিসাঃ ১৬-১৮)

আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যাদেরকেই লুতের কাজ করতে পাওয়া যাবে, তাদের মধ্যে যে করেছে এবং যাকে করেছে উভয়কেই হত্যা করো” (আবু দাউদঃ ৪৪৬২)

“যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ সমকামী অবস্থায় ধরা খায়, তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর।” (আবু দাউদঃ ৪৪৪৮)

এ বিষয়ে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মত সম্পর্কে যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হচ্ছে পুরুষে পুরুষে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া।” [ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হাদীস নম্বর: ৩৪২১]

কুরআন মাজীদের অন্যান্য স্থানে তাদের এ সাধারণ অবস্থা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

“তোমাদের অবস্থা কি এমন হয়ে গেছে যে, চোখে দেখে অশ্লীল কাজ করছো৷” (আন্ নামলঃ ৫৪)

“তোমরা কি এমনই বিকৃত হয়ে গেছো যে, পুরুষদের সাথে সঙ্গম করছো, রাজপথে দস্যূতা করছো এবং নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে খারাপ কাজ করছো৷” (আল আনকাবুতঃ ২৯)

সূরা তাহরীমে নূহ (আ) ও লূতের (আ) স্ত্রীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “এ মহিলা দু’টি আমার দু’জন সৎ বান্দার গৃহে ছিল। কিন্তু তারা তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে” (১০ আয়াত)

অর্থাৎ তারা উভয়ই ছিল ঈমান শূন্য এবং নিজেদের সৎ স্বামীদের সাথে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তারা তাদের কাফের জাতির সহযোগী হয়। এজন্য আল্লাহ যখন লূতের জাতির উপর আযাব নাযিল করার ফায়সালা করলেন এবং লূতকে নিজের পরিবার পরিজনদের নিয়ে এ এলাকা ত্যাগ করার হুকুম দিলেন তখন সাথে সাথে নিজের স্ত্রীকে সংগে না নেবার হুকুমও দিলেন।

কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে লূত জাতীর আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হযরত লূত যখন রাতের শেষ প্রহরে নিজের সন্তান-পরিজনদের নিয়ে বের হয়ে গেলেন তখন ভোরের আলো ফুটতেই সহসা একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ হলো একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প তাদের জনপদকে ওলট-পালট করে দিয়ে গেলো। একটি ভয়ংকর আগ্নেগিরির আগ্নোৎপাতের মাধ্যমে তাদের ওপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করা হলোঃ এবং একটি ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমেও তাদের ওপর পাথর বর্ষণ করা হয়েছে।

লুত, সমকামিতা

বাইবেলের বর্ণনাঃ মরু সাগরের (dead sea) দক্ষিণ ও পশ্চিমে যে এলাকাটি বর্তমানে একেবারেই বিরান ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুরাতন জনপদের ঘর-বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো প্রমাণ করে যে, এটি এক সময় ছিল অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। আজ সেখানে শত শত ধ্বংস প্রাপ্ত পল্লীর চিহ্ন পাওয়া যায়। অথচ বর্তমানে এ এলাকাটি আর তেমন শস্য শ্যামল নয়। ফলে এ পরিমাণ জনবসতি লালন করার ক্ষমতা তার নেই। প্রত্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞগণের ধারণা, খ্রীস্টপূর্ব ২৩০০ থেকে খ্রীস্টপূর্ব ১৯০০ সাল পর্যন্ত এটি ছিল বিপুল জনবসতি ও প্রাচুর্যপূর্ণ এলাকা। আর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আমল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের অনুমান, সেটি ছিল খ্রীস্টপূর্ব দু’হাজার সালের কাছাকাছি সময়। এদিক দিয়ে প্রাচীনের ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য একথা সমর্থন করে যে, এ এলাকাটি হযরত হযরত ইব্রাহীম ও তাঁর ভাতিজা হযরত লূতের সময় ধ্বংস হয়েছিল।

বাইবেলে যে এলাকাটিকে বলা হয়েছে ‘সিদ্দিমের উপত্যকা’ সেটিই ছিল এখানকার সবচেয়ে জনবহুল ও শস্য-শ্যামল এলাকা। এ এলাকাটি সম্পর্কে বাইবেলে বলা হয়েছেঃ জর্দানের সমস্ত অঞ্চল সোয়র পর্যন্ত সর্বত্র সজল, সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায়, মিসর দেশের ন্যায়, কেননা, তৎকালে সদাপ্রভু” সদোম” ও “ঘমোরা” বিনষ্ট করেন নাই।” (আদিপুস্তক ১৩:১০) বর্তমান কালের গবেষকদের অধিকাংশের মত হচ্ছে, সে উপত্যকাটি বর্তমানে মরুসাগরের বুকে জলমগ্ন আছে। বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে এ মত গঠন করা হয়েছে। প্রাচীনকালে মরুসাগর দক্ষিণ দিকে আজকের মতো এতোটা বিস্তৃতি ছিল না। ট্রান্স জর্দানের বর্তমান শহর ‘আল করক’-এর সামনে পশ্চিম দিকে এ হ্রদের মধ্যে ‘আল লিসান’ নামক একটি ব-দ্বীপ দেখা যায়। প্রাচীন কালে এখানেই ছিল পানির শেষ প্রান্ত। এর নিম্নাঞ্চলে বর্তমানে পানি ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্বের এটি উর্বর শস্য শ্যামল এলাকা হিসেবে জনবসতিপূর্ণ ছিল। এটিই ছিল সিদ্দিম উপত্যকা এবং এখানেই ছিল লূতের জাতির সাদোম, ঘমোরা, অদমা, সবোয়ীম ও সুগার-এর মতো বড় বড় শহরগুলো। খ্রীস্টপূর্ব দু’হাজার বছরের কাছাকাছি এক সময় একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ উপত্যকাটি ফেটে ভূগর্ভে প্রোথিত হয়ে যায় এবং মরুসাগরের পানি একে নিমজ্জিত করে ফেলে। আজো এটি হ্রদের সবচেয়ে অগভীর অংশ। কিন্তু বাইজানটাইন শাসকদের যুগে এ অংশটি এতো বেশী অগভীর ছিল যে, লোকেরা আল লিসান থেকে পশ্চিম তীর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পানি পার হয়ে যেতো। তখনো দক্ষিণ তীরের লাগোয়া এলাকায় পানির মধ্যে ডুবন্ত বনাঞ্চল পরিষ্কার দেখা যেতো। বরং পানির মধ্যে কিছু দালান কোঠা ডুবে আছে বলে সন্দেহ করা হতো।

বাইবেল ও পুরাতন গ্রীক ও ল্যাটিন রচনাবলী থেকে জানা যায়, এ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে নাফাত (পেট্টোল) ও স্ফুল্টের কূয়া ছিল। অনেক জায়গায় ভূগর্ভ থেকে অগ্নিউদ্দীপক গ্যাসও বের হতো। এখনো সেখানে ভূগর্ভে পেট্টোল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ভূ-স্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুমান করা হয়েছে, ভূমিকম্পের প্রচণ্ড ঝাকুনীর সাথে পেট্টোল, গ্যাস ও স্ফলট ভূ-গর্ভ থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়ে জ্বলে ওঠে এবং সমগ্র এলাকা ভষ্মীভূত হয়ে যায়। বাইবেলের বর্ণনা মতে, এ ধ্বংসের খবর পেয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম হিব্রোন থেকে এ উপত্যকার অবস্থা দেখতে আসেন। তখন মাটির মধ্য থেকে কামারের ভাটির ধোঁয়ার মতো ধোঁয়া উঠছিল। (আদিপুস্তক ১৯ : ২৮)

লুত আঃ এর কওমের পরিণতি থেকে আমাদের শিক্ষণীয়:
১. বান্দার প্রতিটি ভাল কিংবা মন্দ কর্ম আল্লাহর সরাসরি দৃষ্টিতে রয়েছে। বান্দার সৎকর্মে তিনি খুশী হন ও মন্দ কর্মে নাখোশ হন।
২. নবী কিংবা সংস্কারক পাঠিয়ে উপদেশ না দেওয়া পর্যন্ত আল্লাহ কোন অবাধ্য কওমকে ধ্বংসকারী আযাবে গ্রেফতার করেন না।
৩. কওমের নেতারা ও ধনিক শ্রেণী প্রথমে পথভ্রষ্ট হয় ও সমাজকে বিপথে নিয়ে যায়। তারা সর্বদা পূর্বেকার রীতি-নীতির দোহাই দেয় এবং তাদের হঠকারিতা ও অহংকারী কার্যকলাপের ফলেই আল্লাহর চূড়ান্ত গযব নেমে আসে (ইসরা ১৭/১৬; যুখরুফ ৪৩/২৩)। অতএব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সর্বদা দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা আবশ্যক।
৪. পুংমৈথুন বা পায়ুমৈথুন এমন একটি নিকৃষ্টতম স্বভাব, যা আল্লাহর ক্রোধকে ত্বরান্বিত করে। ব্যক্তিগত এই কুকর্ম কেবল ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, তা সমাজকে বিধ্বস্ত করে। বর্তমান এইড্স আক্রান্ত বিশ্ব তার বাস্তব প্রমাণ।
৫. ঈমান না থাকলে কেবল বংশ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক মানুষকে আল্লাহর গযব থেকে মুক্তি দিতে পারে না। যেমন লূত (আঃ)-এর স্ত্রী গযব থেকে রক্ষা পাননি।

REFERENCES:

১.তাফসীরে ইবনে কাসির
২.আল বিদায়া ওয়াল নেহায়া- ইবনে কাসীর দামেস্কী
৩.দেশ-দেশান্তর(মুফতি ত্বকি উসমানী)
৪.গ্রন্থঃ নবীদের কাহিনী-ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

______________________________________

ইতিকাফ, ইতিকাফ, ইতেকাফ

বুদ্ধিবিত্তিক পর্যালচনা

আমরা দেখতে পাবো যে যারা সমকামিতা সাপোর্ট করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ বাবার নামাজ ও দ্বীনদারিতা নিয়ে পোস্ট করবে কেউ , কেউ পুড়ানী দিনের ইসলামিক ভিডিও শেয়ার করবে, হতে পারে কেউ নিজের ওয়ালে মাকে নিয়ে হজ্ব করার ছবি আপলোড করবে। আন্তরিকভাবে কিংবা অনলাইনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সাধারণ মুসলিমদের কাছে নিজেদের ইমেজ ধরে রাখতে হয়ত তারা এই কাজগুলো করেছে। এভাবে আসলে তারা নিজেদেরকে প্রতারিত করছে। সাথে সাথে সাধারণ মুসলিমদেরকেও প্রতারণায় ফেলছে।

যেমনটা মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,” তারা আল্লাহ ও মুমিনদের প্রতারিত করতে চায়। বস্তুত তারা নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না।”[সূরা বাকারা-৯]

এজন্য তাদের জন্য এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল, লিবারেলিজমের সাথে ইসলামের সংঘর্ষটা বুঝা। লিবারেল চিন্তাচেতনার সাথে ইসলামের সংঘর্ষটা কোথায়?

আমিও আগেও বলেছি, লিবারেলদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্ব সালাত, সওম ও হজ্বের মত কিছু ইবাদাত নিয়ে না। বরং সালাত, সওম করেও কেউ লিবারেল হতে পারে। লিবারেলিজমের সাথে ইসলামের মৌলিক একটা দ্বন্দ্ব হল মানদণ্ডের প্রশ্নে। লিবারেলিজমে আইন, নৈতিকতা এবং অধিকারের মানদণ্ড হল মানুষের প্রবৃত্তি। লিবারেলরা মনে করে কোন ব্যক্তি অন্য কারো বেঁধে দেয়া মানদণ্ড মানতে বাধ্য নন। এখন সেই মানদণ্ড আল্লাহরই দেয়া হোক না কেন। এটাকে বলে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ। ব্যক্তি নিজেই নিজের প্রভু। ইউরোপের এনলাইটেনমেন্টে আন্দোলনের মূল ফসল হল, ব্যক্তিকে নিয়ে এই নির্দিষ্ট ভাবনা।কিন্তু ইসলামী শরীয়তে এসব কিছুর মানদণ্ড আল্লাহর ওহী। কুরআন এবং সুন্নাহ। আর ইসলামে ব্যক্তির অবস্থান হল দাসত্বের, স্বাধীনতার না।কেউ যদি আইন, নৈতিকতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া মানদণ্ডকে অস্বীকার করে তাহলে সে নামাজ রোজা করেও কাফির হয়ে যেতে পারে। একটা কথা আমাদের ভাল করে বুঝতে হবে, ইসলামে প্রবেশ করার জন্য ইসলামের যাবতীয় বিষয়কে মেনে নিতে হয়। কিন্তু ইসলাম থেকে বের হওয়ার জন্য ইসলামের সব বিষয় কিংবা অধিকাংশ বিষয়কে অস্বীকার করতে হয় না। বরং কোন একটা বিষয়ে অবিশ্বাস রাখলেই ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, তোমরা কি পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তারা পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া অন্য কিছু পাবে না। আর কিয়ামতের দিনে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।”[সূরা বাকারা-৮৫]

এবার উদাহরণস্বরূপ সমকামিতার প্রশ্নেই আসি। আল্লাহর প্রদত্ত মানদণ্ডে সমকামিতা অত্যন্ত জঘন্য একটি কাজ এবং এটি সুস্পষ্ট হারাম। এই অপরাধের কারণে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পূর্ববর্তী বিশাল একজাতিকে ভয়াবহভাবে ধ্বংস করেছেন। এই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদেরকে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন প্রকার শাস্তি দিয়ে হত্যা করেছেন। এখন কেউ যদি ইসলামের মানদণ্ডকে মেনে নেয়, সে কখনোই সমকামিতাকে বৈধ এবং অধিকার মনে করতে পারে না। মুসলিম দাবি করেও কেউ যদি এই হারাম কাজটিকে বৈধ এবং ব্যক্তির অধিকার বলে বিশ্বাস রাখে তাহলে সে মুসলিম থাকবে না। বরং সে ইসলামের মানদণ্ডকে কার্যত অস্বীকার করার কারণে মুরতাদ হয়ে যাবে। সমকামিতাকে একটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ আনলাম। ব্যাপারটা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নারীর জন্য কোনটা উচিৎ আর কোনটা অনুচিত এটা আমি ঠিক করে দিতে পারি না। এটা ঠিক করবে আল্লাহর ওহী। সেই মানদণ্ডেই আমাদেরকে নৈতিকতা ঠিক করে নিতে হবে।

কোনটা নারীর অধিকার আর কোনটা পুরুষের অধিকার, কোনটা পুরুষের দায়িত্ব আর কোনটা নারীর দায়িত্ব – প্রশ্নগুলোর উত্তরে মুসলিমরা পাশ্চাত্য মানদণ্ড মানতে পারে না। তারা এই প্রশ্নগুলোর সমাধান খুঁজবে আল্লাহর দেয়া মানদণ্ডে। একজন পুরুষ বাহিরে নারীদের সাথে কথাবার্তা বলে কিনা এবং একজন নারী পরপুরুষদের সাথে আলাপ-গপ্প করে কিনা- আল্লাহর মানদণ্ডে এই জায়গায় খবরদারি করার অধিকার স্বামী-স্ত্রীর কিংবা অভিভাবকদের আছে। কিন্তু লিবারেল মানদণ্ডে এগুলোকে ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আরেকটু গভীরে চিন্তা করুন। সমকামিতাকে ইসলাম হারাম করেছে। আর লিবারেলরা সেটাকে ব্যক্তির অধিকার বলে দাবি করছে। এই দাবির ফলাফলটা কী? এই দাবির আড়ালে মূলত আরেকটা দাবি করা হয়। সেটা হল, মানুষের একটা অধিকারকে নাকোচ করে দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা মানুষের উপর জুলুম করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) ফ্রি মিক্সিং, যিনা- ব্যভিচার সব ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এমনই।

সুতরাং বাহ্যিক কিছু ইবাদাত দেখিয়ে তারা আদতে নিজেদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। তাদের উচিৎ সত্য গ্রহণের মানসিকতা নিয়ে মূল সংঘর্ষটা বোঝা এবং মানদণ্ডের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থানকে সংশোধন করা। আল্লাহর দেয়া মানদণ্ডের জায়গা থেকে সমকালীন ইস্যুগুলোতে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়া। আর সাধারণ মুসলিম ভাইবোনদেরও উচিৎ নয় এখানে প্রতারিত হওয়া। আমাদের সকলকেই মূল সমস্যাটা বুঝতে হবে এবং চিহ্নিত করতে হবে। যদি সমস্যার গোঁড়া বুঝতে না পারি, তাহলে নানা রূপে নানা মানুষ আমাদেরকে লিবারেলিজমের ফেৎনায় ফেলে দিবে। আসলে লিবারেলদের সাথে মুসলিমদের দ্বন্দ্ব কেবল নামাজ নিয়ে না। ব্যক্তিগত কিছু ইবাদাত নিয়ে না। এই সংঘর্ষটা একটা মহান উদ্দেশ্যের সাথে। যেই উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পুরো মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। যেই উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল ফিতরাত আল্লাহ মানুষের ভিতর সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে রেখেছেন। সেই মহান উদ্দেশ্য হল উবুদিয়্যাত আল্লাহর দাসত্ব। মুমিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আবর্তিত হবে এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। লিবারেলরা আমাদের তরুণদের ভিতরে থাকা উবুদিয়্যাতের ফিতরতকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের ভিতরে থাকা দ্বীনি হায়াকে চ্যালেঞ্জ করছে। আল্লাহর শরীয়তকে বিনাবাক্য কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই গ্রহণ করার ফিতরতকে নষ্ট করে শরীয়ত ও ব্যক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। শরীয়তের বিধানকে তরুণদের কাছে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আর সেটা আধুনিকতা, সমাজ পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, ট্যাবু ভাঙ্গার মত মুখরোচক শ্লোগানে তাদের ভিতর পুশ করছে। তরুণদের ফিতরাত নষ্ট হয়ে গেলে তাদের দ্বীনি কোন ভবিষ্যৎ নেই।

কিছু সূরাসহ কিছু আয়াত নাম্বার দিয়ে রাখছি। সবাইকে অনুরোধ করব সেগুলোর অর্থ এবং তাফসীর দেখে নিতে। পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য কোন আলেমের শরণাপন্ন হতে।

[সূরা নাহল-১১৬, সূরা আ’রাফ-৩৩, সূরা ইউনুস-৫৯, সূরা শুরা-২১, সূরা কাহাফ-২৬, সূরা ইউসুফ-৪০, সূরা মায়েদা-৫০, সূরা আনআম- ৫৭।]

—————————-———————————

ইতিহাসের দর্পণে ভারতীয় কামিতা

ভারতীয় ইতিহাসে সমকামিতা একেক সময় একেকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি সমকামিতা অধিকারের জন্য প্রচুর লিখালিখি ও মতামতের জন্য ভারতীয় সরকার এখন সমকামিতা বৈধ করেছে।

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় কামিতা:

প্রাচীন ভারতের পাঠগুলো আধুনিক সমকামিতার অন্যতম কারণ। ধর্ম ভারতের রীতিনীতি ও ঐতিহ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যেহেতু ভারতের বহুল প্রচলিত হিন্দু ধর্মে সমকামিতার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করে নি, তাই বিভিন্ন সময় হিন্দুত্ববাদ সমকামীদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ আবার বৈরিতামূলক অবস্থানে থেকেছে। হিন্দু ধর্মের চারটি ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে ঋগ্বেদে রয়েছে ‘ভিকৃতি ইভাম প্রাকৃতি’ [সংস্কৃত:विकृतिः एवम्‌ प्रकृति] যার অর্থ: যা কিছু দেখতে অপ্রাকৃতিক মনে হয় তাও প্রাকৃতিক। যার ফলে কিছু কিছু পণ্ডিতরা মানবজীবনে সমকামিতাকে সার্বজনীন বৈচিত্র্য হিসেবে দেখে। ভতস্যায়ন কর্তৃক রচিত প্রাচীন ভারতীয় পাঠ কামসূত্রের পুরো একটি অধ্যায় সমকামিতার উপর উৎসর্গ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রশাসন সম্পর্কিত একটি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ অর্থশাস্ত্রে বিভিন্ন ধরণের যৌনচর্চা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে করা হোক না কেন এর সর্বনিম্ন শাস্তি ছিল অর্থদণ্ড। সমকামী সহবাস বৈধ না করা হলেও এটা ছিল অতি সামান্য অপরাধ। তবে বিভিন্নধরনের বৈজাতীয় সহবাসকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয়েছিল।

কুমারী নয় এমন নারীদের সাথে সহবাসের শাস্তি হিসেবে সামান্য জরিমানা করা হত। আর যখন পুরুষের মধ্যে সমকামী যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠে, তখন এর শাস্তিস্বরূপ গরুর পাঁচটি পণ্য [মলমূত্র বা গরুর খাবার] খাওয়া এবং এক রাত উপোস থাকা। এটা সমকামীর জন্য ঐতিহ্যবাহী হয়ে গেছিল। ফলে এই দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি সমাজে নিচু শ্রেণী হিসেবে বিবেচিত হত।[১]

প্রথম দিকের আধুনিক সময়কাল ১৫২৬-১৮৫৮ সাল: 

দিল্লী সালতানাত

আল-বিরুনী উল্লেখ করেন মধ্যযুগে হিন্দু সমাজে সমকামিতা ও পায়ুকাম ছিল বিরল আর হিন্দুরা এটা ব্যাপকভাবে অস্বীকার করেছিল। কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ করেন ইসলামী শরীয়ায় নিষেধ থাকা সত্ত্বেও দিল্লী সালতানাতের সুলতানরা পুরুষদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ত।[২]

মুঘল আমল

ভারতীয় সমকামী এক্টিভিস্টরা দাবী করেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর তার জীবনীতে উল্লেখ করেন তিনি এক বালকের ভালোবাসায় মোহাচ্ছন্ন ছিলেন। [৩] তবে সম্ভবনা আছে এই সমকামী এক্টিভিস্টরা বাবরের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব বা সমকামী আন্দোলন জোরদার করার জন্য এ সকল অযাচিত দাবী করেছেন।

কিছু কিছু সমকালীন ঐতিহাসিক দাবী করেন মুঘলদের উঁচু শ্রেণীর লোকেরা সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন। এবং গর্ভনরদের মধ্যে সমকামিতার প্রবণতার নানা কাহিনী উল্লেখ করেন।[৪] মধ্যেযুগের শেষের দিকে উর্দু কবিতা ‘চাপতি’একই লিঙ্গের মানুষের মধ্যে যৌন সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে। আবার ‘আমরাদ পারাস্ত’কবিতায় দুই যুবা পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।[৫] তবে এখানে প্রবল সম্ভবনা রয়েছে যে, এই সকল লেখক কেবল কবিতা বা প্রচলিত চটকদার উপন্যাস উপর নির্ভর করে মুঘলদের উপর সমকামিতার দোষারোপ করেছে। মজার ব্যাপার হল তারা মূল ধারার ইতিহাস গ্রন্থের দলিল এড়িয়ে গেছে। হয়তো মুঘলদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে তারা এমনটা করেছে।

বৃটিশ উপনিবেশিক সময়কাল ১৮৫৮-১৯৪৭

১৮৬১ সালে বৃটিশ সরকার ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা ও প্রাকৃতিক নিয়মের বিরেদ্ধে যেকোনো যৌন ক্রিয়াকলাপকে অপরাধের আওতায় আনেন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকার খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এই আইন বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।গোয়া ইনকুইজিশন পর্তুগিজ ভারতে পায়ুকামের মূল অপরাধকে মূলোৎপাটন করেছিল।[৬]

গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতবর্ষ ১৯৪৭- চলমান

১৯৭৭ সালে শকুন্তলা দেবী ভারতে সর্বপ্রথম সমকামিতার গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন।[৭] ২০০৯ সাল পর্যন্ত দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হত। হিউম্যান রাইট ওয়াচের ভাষ্যমতে এই আইন Hiv/Aids প্রতিরোধে ব্যবহার হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল যৌনকর্মী, সমকামী ও LGBT গ্রুপ। [৮]

দিল্লীর হাইকোর্টে ১৮৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত ছিল। ২০১৩ সালে দিল্লির আদালতের রায় উত্থাপিত হওয়ার পরে, ২০১৮ ভারতের সুপ্রীম কোর্টের ভারতের নভতেজ সিং জোহর বনাম ইউনিয়নে রায় দেওয়ার আগ পর্যন্ত সমকামী যৌন মিলন পুনরায় অপরাধী হয়েছিল। এটি কোনও ব্যক্তির স্বেচ্ছায় “প্রকৃতির আদেশের বিরুদ্ধে শারীরিক মিলন” করার অপরাধ হিসাবে পরিণত হয়েছিল। [৯]

২০০৯ – ২০১৩

২০০৯ দিল্লি হাইকোর্টের রায় নাজ ফাউন্ডেশন বনাম সরকার কর্তৃক এই আইনটি বাতিল করা হয়েছিল। দিল্লির এনসিটি-র, যেটা ভারতীয় সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের প্রত্যক্ষ লঙ্ঘন হিসাবে সম-লিঙ্গের আচরণের বিরুদ্ধে ৩৭৭ ধারা এবং অন্যান্য আইনী নিষেধাজ্ঞাগুলোর সন্ধান পেয়েছিল।

একটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আইনের সাংবিধানিকতা সম্পর্কিত (অর্থাৎ বিচারিক পর্যালোচনা) সমগ্র ভারতবর্ষেই প্রযোজ্য, কেবলমাত্র সেই রাজ্যের সেই অঞ্চলে নয় যেটার উপরে হাইকোর্টের প্রশ্নে এখতিয়ার রয়েছে।[১০] তবে রায় ঘোষণার পরেও সমকামী গ্রুপগুলোর হয়রানির (বিরল) ঘটনা ঘটেছে। [১১]

১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১২, সুপ্রিম কোর্ট সমকামী লিঙ্গের নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে দায়ের করা একগুচ্ছ আপিলের শুনানির সময় পর্যবেক্ষণ করেছে যে সমকামিতাকে সমাজ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত কারণ অনেকগুলো বিষয় যা আগে অগ্রহণযোগ্য ছিল তা সময় পরিবর্তনের হওয়ার সাথে সাথে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

বিচারপতি জি এস সিংভি এবং বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত দ্বি-বিচারকের বেঞ্চ মতামত দিয়েছেন যে, সমকামিতাকে পরিবর্তনের সময়ের আলোয় দেখা উচিত যেখানে লিভ-ইন সম্পর্ক, একক পিতা-মাতা এবং কৃত্রিম গর্ভধারণের ঘটনাটি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারা আরও উল্লেখ করেছিলেন যে ২০ বছর আগে অনৈতিক বলে বিবেচিত অনেকগুলি বিষয় এখন সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। বেঞ্চ বলেছে যে, ১৮৬০ এর আগে সমকামী সেক্স কোনও অপরাধ ছিল না এবং খাজুরাহোর চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যগুলো থেকে বোঝা যায়।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট অমরেন্দ্র শরণ, যিনি দিল্লী হাইকোর্টের শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য দিল্লি কমিশনের পক্ষে সমকামী যৌনতার সিদ্ধান্তকে নিষিদ্ধ করার আদেশের বিরোধিতা করেছিলে। তখন তিনি বলেছিলেন যে, ভাস্কর্যের ভিত্তিতে সামাজিক ইস্যুগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ অবশ্য পর্যবেক্ষণ করেছে যে, এটা সে সময়ের সমাজের প্রতিচ্ছবি এবং সমকামিতা কেবল যৌন মিলনের ক্ষেত্রে দেখা উচিত নয়। এর আগে, সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ সমকামী বিরোধী অধিকার দলগুলোকে সমকামী লিঙ্গের বৈধকরণকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, প্রকৃতির আদেশের পরিপন্থী আচরণগুলো কীভাবে তারা সম্ভব করেছে। হাইকোর্ট সমকামী বিরোধী অধিকারকর্মীদের দ্বারা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর দায়ের করা মামলা শুনানি করছিল যা দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের দেখার বিরোধিতা করেছিল। রায়টি ছিল সমকামী আচরণকে অপরাধ হিসেবে না দেখা।

তবে, ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ সালে UPA সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টের একটি পর্যবেক্ষণের জবাব দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল যে এটি সমকামী লিঙ্গের নিষেধাজ্ঞার বিরোধী ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাইকোর্টকে বলেছিল, “এটি অত্যন্ত অনৈতিক এবং সামাজিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।” এতে বলা হয়েছে যে ভারতের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ অন্যান্য দেশের চেয়ে পৃথক। সুতরাং, জাতিকে তাদের দ্বারা পরিচালিত হতে দেওয়া উচিত নয়।[১২]
কেন্দ্রীয় সরকার সমকামী লিঙ্গকে ডিক্রীমিনালাইজ করার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি নেই বলে জোর দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১২ সালে তার অবস্থানটি পাল্টে দিল। এর ফলশ্রুতিতে SC এই বিষয়টি নিয়ে ঘন ঘন তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য কেন্দ্রকে টেনে তুলল। সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি সরকারকে বললেন, সিস্টেমটিকে উপহাস করবেন না এবং আদালতের সময় নষ্ট করবেন না। [13]

এছাড়াও ২০১২ সালে IBM, Goldman Sachs দ্বারা ‘Creating Inclusive Workplaces for LGBT Employees in India’ শীর্ষক একটি গাইড তৈরি করেছিল।[১৪]

তবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের শীর্ষ আদালত সমকামী আইনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত দিল্লি হাইকোর্টের ২০০৯ সালের একটি যুগান্তকারী প্রতিক্রিয়াকে সমকামী যৌন অপরাধকে অপরাধী করার আইনটিকে সমর্থন করে। আদালত বলে যে, বিষয়টি নিয়ে আইন প্রণয়ন করার অধিকার সংসদের হাতে রয়েছে।

ভারতীয়রা ঐতিহ্যবাহীভাবে ১৫৩ বছর বয়সী উপনিবেশিক যুগের আইন ৩৭৭ ধারাটি ব্যাখ্যা করে, এটা একটি সমকামী সম্পর্ককে “অপ্রাকৃত অপরাধ” হিসাবে তীব্র নিন্দা জানায় এবং এটা ১০ ​​বছরের জেল হিসাবে দণ্ডনীয়ও বলে বিবেচনা করে। ২০০৯ সালের আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি পুনঃস্থাপনের জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিল। [১৫]

২০১৩ – বর্তমান

ভারত জুড়ে ৩৭৭ ধারা পুনঃস্থাপনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল এবং এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোতে এই আইন বাতিলের জন্য সক্রিয়তা দেখা যায়। ২০১৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে, আসন্ন নির্বাচনের মাসে কমপক্ষে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল – আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সমকামী সম্পর্কের ডিক্রীমিনালাইজেশন সমর্থন করেছিল। [১৬]

মাদোরাই বিজেপি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক বনাথী শ্রিনিবাসন ২০১৪ সালে জুলাই মাসে তামিল ভাষায় Genderqueer সম্পর্কিত প্রথম বই এবং LGBTQIA সম্পর্কিত প্রথম তামিল গ্রন্থ প্রকাশ করেন। [১৭]

দীর্ঘমেয়াদি সহচরদের কারণে LGBTIQ লোকদের জন্য ২০১৬ সালের জুনে ভারতের আমুর কুইর ডেটিং একটি ডেটিং প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। ২০১৭ সালে ভোপালে ২০০ সদস্যের অংশগ্রহণে সর্বপ্রথম প্রাইড মার্চ পরিচালিত হয়।

২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে ভারতে সমকামিতাকে বৈধ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট অনুচ্ছেদ ৩৭৭ কে বাতিল করে। [১৮]সমকামীতাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে উপনিবেশীক যুগের আইনকে আঘাত হেনে একজন বিচারক বলেন, “ এই যুগান্তরকারী সিন্ধান্তটি একটি ভালো ভবিষ্যতের পথ তৈরি করবে”।[১৯]

তথ্যসূত্র:
১. Vanita & Kidwai 2001, p. 25

২. Eraly, Abraham (Apr 1, 2015). The Age of Wrath: A History of the Delhi Sultanate. Penguin UK. ISBN 9789351186588. Retrieved Aug 15, 2019 –via Google Books.
Vanita, Ruth (Oct 20, 2008). Same-Sex Love in India. Penguin Books Limited. ISBN 9788184759693. Retrieved Aug 15, 2019 –via Google Books.

৩. Salam, Ziya Us (2014-02-15). “An emperor with foibles”. The Hindu. ISSN 0971-751X. Retrieved 2019-08-24.

৪. Eraly, Abraham (Jul 17, 2007). The Mughal World. Penguin Books Limited. ISBN 9788184753158. Retrieved Aug 15, 2019 – via Google Books.
Vanita, Ruth (Oct 20, 2008). Same-Sex Love in India. Penguin Books Limited. ISBN 9788184759693. Retrieved Aug 15, 2019 –via Google Books.

৫. Sondy, Amanullah De (Nov 7, 2013). The Crisis of Islamic Masculinities. A&C Black. ISBN 9781780936932. Retrieved Aug 15, 2019 –via Google Books.

৬. “Xavier was aware of the brutality of the Inquisition”. Deccan Herald. Deccan Herald. 27 April 2010. Retrieved 18 September 2017.
Sharma, Jai. “The Portuguese Inquisition in Goa: A brief history”. Indiafacts.org. Retrieved 18 September 2017.

৭. Subir K Kole (2007-07-11). “Globalizing queer? AIDS, homophobia and the politics of sexual identity in India”. Globalization and Health. 3: 8. doi:10.1186/1744-8603-3-8. PMC 2018684. PMID 17623106.: “The first academic book on Indian homosexuals appeared in 1977 (The World of Homosexuals) written by Shakuntala Devi, the mathematics wizkid who was internationally known as the human computer. This book treated homosexuality in a positive light and reviewed socio-cultural and legal situation of homosexuality in India and contrasted that with the then gay liberation movement in USA.”
Shakuntala Devi (1977). The World of Homosexuals. Vikas Publishing House. ISBN 9780706904789.
Jeffrey S. Siker (2006). Homosexuality and Religion. Greenwood Publishing Group. p. 127. ISBN 9780313330889.: “In her 1977 book, mathematician Shakuntala Devi interviewed.

৮. “India: Repeal Colonial-Era Sodomy Law”. Human Rights Watch. January 11, 2006. Archived from the original on April 13, 2008. Retrieved March 3,2020.

৯.“Where is it illegal to be gay?”. BBC News. 10 February 2014. Retrieved 11 February 2014.

১০. Kusum Ingots v. Union of India, (2004) 6 SCC 254: “An order passed on a writ petition questioning the constitutionality of a Parliamentary Act, whether interim or final, keeping in view the provisions contained in Clause (2) of Article 226 of the Constitution of India, will have effect throughout the territory of India subject of course to the applicability of the Act.

১১. Pervez Iqbal Siddiqui (28 December 2010). “Crackdown on gay party in Saharanpur, 13 held”. The Times of India. Retrieved 20 January 2011.

১২.http://www.mumbaimirror.com/article/3/2012022320120223141327934d025428/Homosexuality-Govt-opposes-HC-verdict-in-apex-court.html%5B%5D

১৩. “Supreme Court pulls up Centre for flip-flop on homosexuality – Indian Express”. archive.indianexpress.com. Retrieved Aug 15, 2019.

১৪.“Lesbian, gay, bisexual and transgender resource guide for employers – The Times of India”. The Times Of India.

১৫.“India top court reinstates gay sex ban”. BBC News. 11 December 2013.
The text of the law actually reads, “Unnatural offences.–Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with 1*[imprisonment for life], or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine. Explanation.-Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section.

১৬. “Manifestos bring hope to lesbians, gays et al (Election Special)”. Mar 28, 2014. Retrieved Aug 15, 2019 – via Business Standard.

১৭. “It’s a great honour to be awarded for book on gender variants: Gopi Shankar | Madurai News – Times of India”. The Times of India. Retrieved Aug 15, 2019.

http://www.asianage.com/india/bjp-supports-tn-leader-book-lgbt-157

“BJP leader launches LGBT rights book in TN”. Mumbai Mirror. Retrieved Aug 15, 2019.

১৮. Rautray, Samanwaya (6 September 2018). “Section 377: SC rewrites history, homosexual behaviour no longer a crime”. The Economic Times. Retrieved 6 September 2018.

১৯.“India’s Supreme Court strikes down law that punished gay sex”. ABC News.

______________________________________

FACEBOOK   |  YOU-TUBE  | PINTEREST